পাঁচ দিন বুকে গুলি নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে যাওয়া হৃদয়ের শ্বাস থেমে গেলো 

সহপাঠীদের অভিযোগ

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া
হৃদয় চন্দ্র তরুয়া  © সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেও আন্দোলনকারী শুনে হাসপাতালগুলো সার্জারি করাতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার সহপাঠীরা। এ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় ৫ দিন পর মৃত্যু হয় এ শিক্ষার্থীর।  

২৩ জুলাই মঙ্গলবার সকালে মারা যায় হৃদয়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। তার অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা। তিনিও কোটা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। 

উমামা ফাতেমা ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে লেখেন, ‘গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে আন্দোলনে ছাত্রলীগ গুলি চালালে হৃদয়ের বুকে গুলি লাগে। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের কথা ছিল ওর ওপেন হার্ট সার্জারি করে বুলেট বের করতে হবে। কিন্তু সে আন্দোলনকারী হওয়ায় তার সার্জারি করতে চাচ্ছিল না। তার উপর ওপেন হার্ট সার্জারি করতে কয়েক লাখ টাকা লাগে। ১৮ তারিখ রাতে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে সব মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম ও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালগুলোর কথা ছিল সার্জারির আগে ৬০-৭০% টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তীতে ২০ তারিখ সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল আনা হয়। ঢামেকে ICU ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি। 

তিনি আরো বলেন, তখন আমাকে আরিফ মঈনুদ্দীন ভাই একটা ICU ম্যানেজ করার জন্য কল দেয়। আমরা একটা প্রাইভেট আইসিইউ  ম্যানেজ করতে পারি কিন্তু তখনো কোনো মেডিকেল সার্জারি করতে রাজি হয় না। পরে হৃদয়কে পিজিতে নেয়া হয়, ওখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জানার পরে ওকে এক্সেপ্ট করে না।

এরপর স্কয়ারে যোগাযোগ করে, ওখানেও একি পরিস্থিতি। প্রায় ১০ লাখ টাকা আগাম পরিশোধ করতে হবে। নইলে সার্জারি হবে না। তারপর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেয়ার পর তারাও ফিরিয়ে দেয়। এভাবে ৫ দিন পর্যন্ত বুকে গুলি নিয়ে হৃদয় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে থাকে। গত ২৩ জুলাই সকালে সে মারা গেছে।

হৃদয় অনেক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসছিল। তার নিশ্চয়ই অনেক স্বপ্ন ছিল নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই সে সক্রিয় ছিল।

হৃদয় শহিদ হয়েছে উল্লেখ করে এ শিক্ষার্থী লেখেন, হৃদয় শহিদ হয়েছে। অগণিত হৃদয় এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে এ নিয়ে ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।


সর্বশেষ সংবাদ