হলে স্বামীকে আটকে জাবির জঙ্গলে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৩১ AM , আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৯ AM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আব্দুর রাশিক বলেন, ‘‘ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
ঘটনা শুনে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে এসেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। -প্রক্টর
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
জানা যায়, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। সে সুবাদে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলে তাকে নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন।
আরও পড়ুন: থানায় আত্মসমর্পণ করলেন ধর্ষণে অভিযুক্ত জাবি ছাত্রলীগ নেতা
তার কথায় ওই নারী জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভেতরে ওই (৩১৭ নম্বর) কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। পরে সেখানে তাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘‘মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানান।’’
ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। -থানা পুলিশ
‘‘এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিলেন। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’’-যোগ করেন ওই নারী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘‘মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।’’
আমার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে মামুন আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিলেন। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। -ভুক্তভোগী নারী
এদিকে, ক্যাম্পাসজুড়ে ধর্ষণের এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পর থেকে হল সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি আহ্বান করেছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হাসান শুভ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘‘ঘটনা শুনে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে এসেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’