ঢাবির হলের মূল ভবনের অর্ধেক কর্মকর্তাদের দখলে, সিট পায় না সাধারণ শিক্ষার্থী

কবি জসীমউদ্দিন হল
কবি জসীমউদ্দিন হল  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীমউদ্দিন হলের দক্ষিণ ভবনের প্রায় অর্ধেকাংশ জুড়ে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদের মধ্যে সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিনিয়র ইমাম, প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারীসহ আরও অনেকে তাদের পরিবার নিয়ে আছেন। এদিকে, আবাসন সংকটে হলটিতে তৃতীয় বর্ষে উঠেও এখনো অনেক শিক্ষার্থী সিট পাননি। কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তাদের মাথায় আছে। সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করছেন।

জানা যায়, ১৯৭৬ সালরে ১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের নামে “কবি জসীম উদ্দীন হল” প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম আবাসকি হল ছিল। এই হলটিতে সর্বমোট ১২০টি কক্ষ রয়েছে। সেখানে ৪ সিটের ৭৬টি কক্ষ , ৩ সিটের কক্ষ ৫টি এবং ২ সিটের কক্ষ ৩৯টি।

এ ব্যাপারটি আমাদের মাথায় আছে। এটা নিয়ে আমি কাজ করছি। আমি এসেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রথমে মিটিং করেছি। সেখানেই তারা এই সমস্যা সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছে। -শাহীন খান, প্রাধ্যক্ষ

হলটিতে দুটি ভবন রয়েছে। একটি দক্ষিণ ভবন অন্যটি উত্তর ভবন। দক্ষিণ ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য মাত্র দুটি কক্ষ রয়েছে। তবে ২য় তলা পুরোটাতেই শিক্ষার্থীরা থাকছেন। ৩য় তলায় অর্ধেক শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ বাকি অর্ধেকে একটি রিডিং রুম। বাকি জায়গায় থাকেন দুজন কর্মকর্তার পরিবার। চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পরিবারসহ থাকছেন।

জানা যায়, হলটি যখন তৈরি হয় তখন আবাসিক শিক্ষকদের জন্য কোনো আবাসস্থল ছিলো না। ফলে ব্যাচেলর আবাসিক শিক্ষকদের জন্য ভবনটির একাংশ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে করে শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সংযোগ না থাকে। এজন্য আলাদা সিড়িও তৈরি করা হয়েছে।

May be an image of text

পরবর্তীতে হল টিউটরদের জন্য আবাসস্থল তৈরি করা হলে তারা চলে যান। এরপর সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকতে শুরু করেন। প্রধান বাগান মালি এবং মসজিদের ইমামসহ আটটি ফ্যামিলি থাকেন হলের এই মূল ভবনে।

হল প্রশাসনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমিসহ আটটি পরিবার এখানে থাকেন। তাদের মধ্যে সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হক ভূঁইয়ার পরিবার, সিনিয়র ইমাম হাফেজ উসাইদ আহমেদ, প্রধান সহকারী আব্দুল জলিল, উচ্চমান সহকারী শহিদুল ইসলাম, সিনিয়র ইলেক্ট্রিশিয়ান আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র অফিস অ্যাটেন্ডেন্ট মামুনুর রশীদ এবং বাগান মালি নজরুল ইসলামের পরিবারও আছেন।

May be an image of text that says "কবি জসীমউদ্দিন হল ভবনের নিচতলায় THE DAILY CAMPUS শিক্ষার্থী ওয় পঞ্চম তলায় আধেক। উত্তর ও দক্ষিণ নামে হলটিতে দুটি ভবন রয়েছে। সর্বমোট ১২০টি কক্ষ। সিটের ৭৬টি কক্ষ, ৩ সিটের কক্ষ ৫টি এবং ২ সিটের কক্ষ ৩৯টি। দক্ষিশ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীরা গণরুমে, কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের রুমে"

তিনি বলেন, আমাদের জন্য ভবন বা থাকার জায়গা দিলে আমরা চলে যাবো। আমরাও বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কথা শুনি। তারা চায় না আমরা এখানে থাকি। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের জন্য ভবনও দিচ্ছে না, থাকার জায়গাও দিচ্ছে না। ভাড়া কত দিতে হয়—জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে ৩-৪ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। এছাড়া গ্যাস বিদ্যুৎ এবং পানির কোনো খরচ দিতে হয় না।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলে তাদের নিজেদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলো রয়েছে, কর্মকর্তারাও একই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। যার ফলে তারা নিজেরাই হল থেকে যেতে চান না। তবে এবারের প্রাধ্যক্ষ শাহীন খানের উপর ভরসা রাখছেন তারা। তিনি নিয়োগের পরপরই শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক ইতিবাচক কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

কর্মকর্তাদের যারা থাকছেন তাদেরও আসলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এদেরকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে পারলে আবাসিক সংকট কিছুটা হলেও কমতো। -তানভীর হাসান সৈকত, সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ

হলের একটা মূল ভবনের প্রায় অর্ধেকাংশ জুড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থানের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিট সংকটে ভুগছেন। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ আছে সিট না পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের মাস্টার্স এবং কবি জসীমউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইরতাজুল হক রিয়ান বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আমাদের হলের দক্ষিণ ভবনের অনেকগুলো রুমে কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এত বছর পরও তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

রিয়ান বলেন, আমরা ভিসি স্যারের কাছে আবেদন জানাই যে তিনি আমাদের হলের আবাসন সংকট দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। আমাদের হল প্রভোস্ট শাহীন খান স্যার আমাদের দাবি ভিসি স্যারের কাছে তুলে ধরবেন বলে আমরা আশা করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত যেহেতু আমাদের হলের, তাই আমরা সৈকত ভাইয়েরও সহযোগিতা কামনা করছি।

May be an image of 1 person and buildings

গণরুমে থাকা হলটির শিক্ষার্থী আশিক খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আর কোনো হল নেই যেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে হল প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং অবৈধ একটা আবাসন। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। এতে করে হলের বৈধ শিক্ষার্থীরাও মারাত্মক সিট সংকটে ভুগছেন। এমনও আছে, তৃতীয় বর্ষের আগে কেউ হলের রুমগুলোতে সিট পাচ্ছেন না। গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের।

কবি জসীমউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয় নিয়ে সর্বপ্রথম আমরাই আন্দোলন করেছিলাম। যারা থাকছেন তাদেরও আসলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এদেরকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে পারলে আবাসিক সংকট কিছুটা হলেও কমতো। আমি প্রাধ্যক্ষ স্যারের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি, আবারও বলবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আর কোনো হল নেই যেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে হল প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং অবৈধ একটা আবাসন। -ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী

তিনি আরও বলেন, আবাসিক সমস্যা সব হলেই আছে। কিন্তু মূল ভবনের অর্ধেক জুড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থানের ফলে জসিমউদদীন হলে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহীন খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ব্যাপারটি আমাদের মাথায় আছে। এটা নিয়ে আমি কাজ করছি। আমি এসেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রথমে মিটিং করেছি। সেখানেই তারা এই সমস্যা সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছে। আমি ছাত্রনেতাদের সাথেও কথা বলেছি। সামনে উপাচার্য স্যার বরাবরও এই একদফা দাবি আমি উত্থাপন করবো। শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক যেকোনো কাজ করতে আমি এবং আমার প্রশাসন সব সময় প্রস্তুত।


সর্বশেষ সংবাদ