ভিসির বাসভবনে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা, মুখোমুখি উপাচার্য-শিক্ষক সমিতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চবি ভিসি ও ভিসি কার্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নেতাদের অবস্থান
চবি ভিসি ও ভিসি কার্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নেতাদের অবস্থান  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগ ও আইন বিভাগের বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ-বোর্ড নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। এ ঘটনার জেরে আজ রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) দিনভর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। পরে নানা নাটকীয়তা শেষে এই নিয়োগ-বোর্ড উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে অবৈধভাবে নিয়োগ কার্যক্রম করায় ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে চবি শিক্ষক সমিতি।

জানা গেছে, আজ আইন বিভাগে দুজন প্রভাষক নিয়োগের বোর্ড ও আগামীকাল সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলা বিভাগের সাতজন প্রভাষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড বসার কথা ছিল। এটি মূলত উপাচার্য কার্যালয়ে বসে। এদিকে, দুপুরে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক আইন বিভাগ ও বাংলা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে চিঠি দিতে উপাচার্য কার্যালয়ে গেলে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় উপাচার্যের উপস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী চিঠি পাঠ করার এক পর্যায়ে উপাচার্য উত্তেজিত হয়ে পড়েন। উপাচার্যপন্থী ও শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্য দপ্তরে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। 

এ ঘটনার পর শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক দুপুর ২টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এদিকে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে অবস্থান কর্মসূচির মুখে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার গোপনে কার্যালয় ত্যাগ করেন। তিনি কার্যালয় ত্যাগ করলেও তার পছন্দের প্রার্থীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে গোপনে তার বাসভবনে পরীক্ষা বোর্ড বসান।

পরে সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে কর্মসূচি ঘোষণা করে চবি শিক্ষক সমিতি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদত্যাগের একদফা দাবিতে আগামীকাল সোমবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুই ঘণ্টা অবস্থান নেবেন শিক্ষকরা।

এদিকে, সন্ধ্যায় ভিসির বাসভবনে এই শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও আইন বিভাগের সভাপতি ড. রকিবা নবী।

তিনি বলেন, আজকে আমাদেরকে অবৈধ ভাবে শিক্ষক নিয়োগে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন ভাইভার জন্য গেলাম সেখানে দেখি শিক্ষক সমিতিসহ ৪০-৫০ জন একসাথে ভিসি অফিসে ঢুকে গেছে। আমাদের দুপুরে বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওনাদের (শিক্ষক সমিতি) অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে পরবর্তীতে ভিসি ম্যামের বাসভবনের অফিসে আমরা ভাইভা নিয়েছি। এখানে পুরোপুরি আইন মান্য করেই সবকিছু হয়েছে। বলা আছে পরিকল্পনা কমিটি যদি তিনবার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ না করেন তবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপাচার্য নির্বাহী ক্ষমতায় নিয়োগ দিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষক প্রয়োজন কিনা সেটা আমরা জানি। সামনে আমাদের কিছু কোর্স চালু হবে। তারা তর্কের খাতিরে তর্ক করছেন। তারা ভিসি অফিস ঘেরাও করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন যা নজিরবিহীন ঘটনা। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জার। 

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, উপাচার্য সবার অগোচরে নিজের বাংলোতে নিয়োগ প্রার্থীদের ভাইভা নিয়েছেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে বাংলোতে গিয়ে ভাইভা নেওয়াটা নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগেও আমরা বিভিন্ন যৌক্তিক দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছি। তবে প্রশাসন সেদিকে কর্ণপাত করেনি। অন্যায়কে বাস্তবায়ন করার জন্য আজ যে গর্হিত কাজ উপাচার্য করেছে তা আইনের পরিপন্থি। এই ঘটনায় উপ-উপাচার্যেরও দায় আছে বলে মনে করি।


সর্বশেষ সংবাদ