পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি জাবি প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও শুরু হয়নি প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবনের নির্মান কাজ।

জানা যায়, ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদিত হওয়া অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ তিন ধাপে ২০২৩ সালের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে প্রায় ১৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় এই মহা প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ।

এতে ১০০০ আসন বিশিষ্ট ৩ টি ছেলেদের ও ৩ টি মেয়েদের আবাসিক হলের কাজ শুরু হয়। যার নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর  ২০২২ সালের ২৭ মে প্রকল্পের ২য় ধাপের কাজ শুরু হয়। যেখানে নতুন প্রশাসনিক ভবন, স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও লেকচার থিয়েটার ছাড়াও কয়েকটি খেলার মাঠ নির্মাণ ও সংস্কার, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ ও সংস্কার সহ মোট ১৪ টি ভবনের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পের এই ধাপে।

তবে এই ধাপের অন্যান্য অঙ্গের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায় নি। এতে প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন বলেন, অফিসে কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ডেস্ক নাই, বসার জায়গা নাই। সবাইকে একসাথে গাঁদাগাদি করে বসে কাজ করতে হয়। আমাদের দাফতরিক কাজের জটিলতা দূর করতে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো বার বার বাধা প্রদান করে এসেছে। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই প্রশাসন এ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবে।

কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আ. রহিম বলেন, নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আসবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষর্থী সহ সুবিধাভোগী সকলেই এটার সুফল ভোগ করবেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অংশীজন ও প্রশাসনের সহযোগীতা প্রত্যাশা করছি।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দশতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয়। তারা জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ এখন প্রশাসনিক দফতরগুলো একেকটি একেক জায়গায় থাকায় প্রশাসনিক কাজে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতিও হয়।’ তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছে, প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা নেই।

এ বিষয়ে প্রকল্পের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবনের ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুমোদনের অপেক্ষায়। এগুলো অনুমোদন হলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন বলেন, নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে গত ১২ই আগস্ট আমাদের প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে আমরা তুলে ধরেছি আমাদের যে কম্পোনেন্ট গুলো বাকি আছে; সে কম্পোনেন্ট গুলো টেন্ডার করতে গেলে কিছু ব্যয় বৃদ্ধি হবে। সেটার জন্য আমরা ইউজিসিতে চিঠি দিয়েছি। চিঠি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। ওখান থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, ‘আপনাদের আর্থিক বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার পরে আপনার টেন্ডারে যেতে পারবেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সমন্বয় করার জন্য সব প্রশাসনিক দপ্তর এক বিল্ডিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এজন্য নতুন ভবন তৈরি করার বিকল্প নেই।'

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নতুন করে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের চাইতে একাডেমিক ভবন নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।


সর্বশেষ সংবাদ