বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার দাবিতে সরব উপাচার্যরা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  © ফাইল ছবি

আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দিবসটি পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার দাবিতে শক্ত অবস্থান জানিয়েছেন উপাচার্যরা।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। এজন্য যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সরকারকে তা গ্রহণ করতে হবে। জাতির পিতাকে হারানোর ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তারপরেও এ শোককে আমাদের শক্তিতে পরিণত করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২ খুনির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আর একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে জিম্বাবুয়েতে পলাতক থাকা অবস্থায়। বাকি পাঁচ খুনি এখনো পলাতক। নির্মম-নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পার হয়ে গেলেও তারা রয়ে গেছেন অধরা। এই পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে তাতে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

এদের মধ্যে দুজনের অবস্থান জানা গেলেও বাকি তিনজন কোথায় আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ তিনজন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করছেন।

ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও তার আদর্শের মৃত্যু হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয় থেকে কখনো মুছে ফেলা যাবে না। ৭৫’র ১৫ আগস্ট হায়নার দল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধু শেষ হয়ে গেছে। বাঙালি জাতি তাকে ভুলে গেছে। কিন্তু হায়নাদের সে আশা পূরণ হয়নি।

পটুয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘‘১৫ আগস্ট জাতির এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংস ও জঘন্যতম ঘটনার বিরল দৃষ্টান্ত ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তার পথ হারিয়ে ফেলে। আত্মস্বীকৃত এই খুনিরা এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবশ্যই ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। তবেই দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনের সবটুকু সময় দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালে যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে। আর এই জন্মই প্রমাণ করিয়ে দেয় একটা যুদ্ধের পরে স্রষ্টা আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধুকে নেয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৮টি মামলায় ১২ বছর জেল খেটেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের বিস্ময়। সেই বঙ্গবন্ধুকেই নিজ বাড়িতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে একদল দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক সপরিবারে হত্যা করে। যারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন। এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর হয় পাঁচ আসামির। তারা হলেন- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।

আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট ঢাবির ৪০তম সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর

অন্যদিকে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। সবশেষ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি হয়। ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার হন তিনি। এর পাঁচদিন পর ১২ এপ্রিল কার্যকর হয় তার ফাঁসি। তিনি দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন।

বাকি পাঁচ খুনির মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আর কানাডায় আছেন নূর চৌধুরী। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সফল হচ্ছে না সরকার। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব আইন।

এদিকে, খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের কোনো সন্ধান নেই। তারা কোথায় আছেন তার সুনিশ্চিত তথ্য নেই সরকারের কাছে। যদিও তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা জারি রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও তার আদর্শের মৃত্যু হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয় থেকে কখনো মুছে ফেলা যাবে না। ৭৫’র ১৫ আগস্ট হায়নার দল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধু শেষ হয়ে গেছে। বাঙালি জাতি তাকে ভুলে গেছে। কিন্তু হায়নাদের সে আশা পূরণ হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিক কাঠামোর আলোকে শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করতেন। এ কারণেই তিনি দ্রুততম সময়ে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সাংবিধানিক বিধি-বিধানের আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ