ক্যাম্পাস লাইফে প্রেমে বিচ্ছেদ হলে নিজেকে সামলাবেন যেভাবে

প্রেমে বিচ্ছেদ
প্রেমে বিচ্ছেদ   © সংগৃহীত

১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক সাস্থ্য দিবস। আর সম্প্রতি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশ বেড়ে গেছে। আত্মহত্যার পর বেশিরভাগ ঘটনায় দেখা গেছে, এটির নেপথ্যের কারণ প্রেমে বিচ্ছেদ। যেকোন বিচ্ছেদই যন্ত্রণার। আর এই বিচ্ছেদটা যখন প্রেমের সম্পর্কে ঘটে তখন কষ্ট অনুভূতির তীব্রতা অনেকটা বেড়ে যায়। প্রেম হলো মানুষের মনের এক বিশেষ আবেগীয় অবস্থা যা মানুষের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করে। সম্প্রতি  শিক্ষার্থীরা প্রেমে বিচ্ছেদ হলে যেভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে সেটা বেশ উদ্বেগজনক। তাই প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটলে কিভাবে আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে দ্রুত ফিরে আসা যাবে সে বিষয়ে সাজানো হয়েছে আজকের টিপস এন্ড টিউটোরিয়ালস— 

১) প্রেমে বিচ্ছেদ হলে কেন কষ্ট হয় সেটা জানুন 
মানুষ যখন প্রেম করে তখন একটা অভ্যাসে চলে যায়। দেখা যায় যে একজন প্রেমিক প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে তার প্রেমিকার সাথে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা করে, আড্ডা দেয় বা একান্তে সময় কাটায়। এই সময় গুলোতে উভয়ের মধ্যে একটা সুখানুভূতি চলে। এর ফলে মস্তিস্কে এক ধরনের ডোপামিন নিঃসৃত হয়। এভাবে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট হারে ওই ডোপামিনটি নিঃসৃত হতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ যখন একদিন কোন কারনে প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটে তখন আচমকা ওই ডোপামিন নিঃসরণে একটা ছন্দপতন ঘটে। তখন ওই ডোপামিনটির অনুপস্থিতে প্রেম চলাকালীন যে পরিমান সুখ ছিলো মস্তিষ্কে এবার সেই সম পরিমান বা তার চেয়েও বেশি পরিমান কষ্টের অনুভূতি ছড়িয়ে যায় ওই প্রেমিক বা প্রেমিকার হৃদয়ে।
  
২) এটা মনে রাখুন যে বিচ্ছেদের কষ্ট ক্ষণস্থায়ী
বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় যারা প্রেমে বিচ্ছেদের পর আত্মহত্যার মতো সিদ্ধন্ত বেছে নেয় তারা বেশ অসহ্য কষ্টের অনুভূতির ভেতর দিয়ে যায়। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে এই কষ্ট অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। বিচ্ছেদের ৩ দিন পর কষ্টের তীব্রতা যতটা থাকে ১৫ দিন পর কিন্তু সেটা অনেকটা কমে আসে। কিন্তু আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা গুলো বেশিরভাগ সময় চূড়ান্ত  বিচ্ছেদের ঘটনার ২/৩ দিনের মধ্যে ঘটে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ২১ দিনে একবার মানুষের মস্তিস্ক রিফ্রেশ হয়। তাই প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটলে তাৎক্ষনিক ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে এই দুঃখের অনুভূতি কিছুদিন সহ্য করুন। এরপর নিশ্চিত থাকেন কয়েকদিন পর আপনার এই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। 

৩) কষ্টকে চ্যালেঞ্জ করুন 
যেকোন দুঃখ কষ্টের একটা সীমা আছে। এটি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়তে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে কমে। তাই খারাপ সময়টাতে মনে মনে কষ্টকে চ্যালেঞ্জ দিন, আয় বেটা কষ্ট, দেখি তোর জোর কতটুকু! এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পরই দেখবেন যে দুঃখের অনুভূতি অনেকটাই কমে আসছে।

৪) শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করুন
বিচ্ছেদের ফলে যে শোক আপনার মনে জমা হয়েছে সেটিকে শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টা করুন। নিজেকে শেষ করে না দিয়ে এমন কিছু করুন যাতে যে মানুষটি আজ আপনাকে ছেড়ে গেল সে যেন কোন একদিন এই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়। এভাবে দৃঢ় চিত্তে কাজে লেগে পড়ুন। দেখবেন কাজের ফাকে আপনার প্রাক্তনের কথা বেশি একটা আর মনেই পড়বে না। 

৫) প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকুন
বিচ্ছেদের পর ঘরের কোনে লুকিয়ে না থেকে কোন কাজের সাথে যুক্ত হন। কাজ না থাকলে প্রয়োজনে একা একা রাস্তায় হেটে মানুষ দ্যাখেন। হাট বাজারে গাড়ি রিকশা দ্যাখেন। স্ট্রিট ফুড কিনে খান। দেখবেন অনেকটা হালকা লাগবে। এই সময়টাতে কাছের বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি আড্ডা দিন। পছন্দের গান শুনুন, মুভি সিরিজ দেখুন। অনেক সময় দুঃখের গানও মনের অনুভূতি ব্যাক্ত করে মনকে হালকা করে। এছাড়া খারাপ লাগলে মনের কথা গুলো বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন। 

৬) নামাজ পড়ুন/ প্রার্থনা করুন
নামাজ বা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা মানুষের মনে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। তাই বিচ্ছেদের এই সময়ে বেশি বেশি নামাজ আদায় ও প্রার্থনা করতে পারেন। এতে আপনার মন ও শরীর দুটিই শান্ত থাকবে। 

৭) কান্না পেলে প্রচুর কাঁদুন
বিচ্ছেদের পর কান্নার ব্যাপারে কোন আপোষ নেই। প্রয়োজনে বাথ রুমে গিয়ে কাঁদুন। দেখবেন কাঁদলে অনেকটা হালকা লাগবে। ভেতরে জমা রাগ অভিমান অনেকটা কমবে। কান্নার সাথে সাথে মানুষের দুঃখের তীব্রতা অনেকখানি বের হয়ে যায়। 

৮) কোথাও ঘুরে আসুন
যেকোনো ধরনের শারীরিক মানসিক কষ্ট কমাতে ভ্রমণের বা বায়ু পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই। প্রেমে বিচ্ছেদের এই সময়টাতে যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রকৃতির খোঁজে বেরিয়ে পড়ুন। সাগর, পাহাড়, বন এগুলো মানুষের মনকে উজ্জীবিত করে। 

৯) পরিবারের সাথে সময় কাটান
যারা হলে থাকেন তারা প্রেমে বিচ্ছেদের পর যদি পারেন বাড়ি চলে যান। বাড়ি গিয়ে বাবা, মা, ভাই বোনদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খান, আড্ডা দিন। দেখবেন আপনার প্রেমের কষ্ট খুব দ্রুতই কমে যাচ্ছে। কষ্টের তীব্রতা বেশি হলে প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের কাছে আপনার বিচ্ছেদ ও বর্তমান মানসিক অবস্থার কথা শেয়ার করুন। দেখবেন অনেকটা মুক্তি পাবেন। 

লেখক হুমায়ুন আজাদ তার একটা প্রবচনে বলেছিলেন, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম। অর্থাৎ একবার প্রেমে বিচ্ছেদের পরই মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায় না। মানুষ তার এই কষ্টের সময়টা চলে গেলে আবারও নতুন করে অন্য কারও প্রেমে পড়তে পারে। তাই কখনও ভাববেন না যে এই বিচ্ছেদটাই আপনার জীবনে সবকিছু। শুধু কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরে এই সময়টাকে একটু সহ্য করুন। দেখবেন সময়ের সাথে আপনার বিচ্ছেদের কষ্ট সব ধুয়ে মুছে চলে যাবে। আপনি আবারও নতুন প্রেমে পড়বেন। আবারও আপনার হাঁসি মেশাবেন অন্য কারো হাঁসিতে। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence