জনপ্রিয় হচ্ছে ই-সিম! জানুন এর সুবিধা-অসুবিধা

প্রতীকি ছবি
প্রতীকি ছবি  © সংগৃহীত

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনধারা। প্রতিনিয়ত স্মার্ট হচ্ছে আমাদের ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ফোন থেকে একেবারে বিদায় নিতে চলেছে চিরচেনা সিম কার্ড। এর জায়গা নিচ্ছে আধুনিক ও ভার্চুয়াল প্রযুক্তি ই-সিম।
সম্প্রতি গুগল জানিয়েছে, তাদের নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আর থাকবে না সিম স্লট। অর্থাৎ সিম কার্ড ছাড়াই চলবে ফোন। এতে প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে কল বা ইন্টারনেট ব্যবহার হবে কীভাবে? এর উত্তর একটাই ই-সিম।

ই-সিম কী?
ই-সিম বা Embedded SIM (Embedded Subscriber Identity Module) হলো একটি ভার্চুয়াল সিম, যা ফোনের মাদারবোর্ডে ছোট একটি চিপ আকারে সংযুক্ত থাকে। এটি প্রচলিত সিম কার্ডের মতোই কল, মেসেজ, ডেটা ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে। তবে আলাদা করে ফোনে সিম ঢোকানোর বা বের করার কোনো ঝামেলা নেই। আপনার পছন্দের মোবাইল অপারেটরের সেবা পেতে শুধু একটি কিউআর কোড স্ক্যান বা কিছু সেটিংস পরিবর্তন করলেই চলবে।

বাংলাদেশে ই-সিমের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে ই-সিম প্রযুক্তি। গ্রামীণফোন ইতোমধ্যেই প্রিপেইড, পোস্টপেইড এবং মাইগ্রেশন ব্যবহারকারীদের জন্য ই-সিম চালু করেছে। রবি ও এয়ারটেল-ও ই-সিম সেবা দিচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৩.৪ বিলিয়ন ব্যবহারকারী ই-সিমে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে।

ই-সিম ব্যবহারের সুবিধা

সহজে অপারেটর পরিবর্তন
একটি বড় সুবিধা হলো ক্যারিয়ার বা সিম কোম্পানি পরিবর্তন করতে আলাদা করে সিম বদলানোর প্রয়োজন নেই। কেবল একটি অনলাইন অনুরোধ বা কিউআর কোড স্ক্যান করলেই সিম বদল সম্ভব।

আন্তর্জাতিক ভ্রমণে উপকারী
বিদেশে ভ্রমণের সময় ই-সিমের মাধ্যমে খুব সহজেই স্থানীয় নম্বর ব্যবহার করা যায়। এতে রোমিং চার্জ অনেকটা কমে যায়।

এক ফোনে একাধিক নম্বর
একটি ই-সিম ফোনে একাধিক নম্বর যুক্ত করা যায়। যেমন: অফিস ও ব্যক্তিগত নম্বর আলাদা রাখা সম্ভব। অনেক ফোনে একসঙ্গে ৫টি পর্যন্ত ই-সিম সংরক্ষণ করা গেলেও সাধারণত ২টি একসঙ্গে সক্রিয় রাখা যায়।

ফোন আরও সুরক্ষিত
ই-সিম ফোনে আলাদা সিম স্লট না থাকায় ফোনে এক ছিদ্র কমে যায়। ফলে পানি, ধুলাবালু বা আর্দ্রতা থেকে ফোন আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত থাকে।

ফোনের জায়গা সাশ্রয়
সিম ট্রে না থাকায় ফোনে অতিরিক্ত সেন্সর, বড় ব্যাটারি বা নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার সুযোগ বাড়ে।

চুরি ঠেকাতে সহায়ক
কারণ ই-সিম খুলে ফেলা যায় না, তাই চুরি হওয়া ডিভাইস ট্র্যাক করা সহজ হয়। অপরাধীরা সহজে সিম ফেলে দিতে পারে না।

আরও পড়ুন: দিনভর ফোনে চার্জ বাঁচাতে যা করবেন

ই-সিম ব্যবহারের অসুবিধা

ফোন বদলানো ঝামেলাপূর্ণ
এক ফোন থেকে অন্য ফোনে ই-সিম সরাসরি স্থানান্তর করা যায় না। নতুন ফোনে নতুনভাবে একটিভেশন করতে হয়।

একাধিক নম্বর ব্যবহারেও সীমাবদ্ধতা
একাধিক ই-সিম সংরক্ষণ করা গেলেও সবগুলো একসঙ্গে সক্রিয় রাখা যায় না। কল আসলে এক সিম ব্যতীত অন্যগুলো বন্ধ থাকতে পারে।

এখনও সব ফোনে নেই ই-সিম সাপোর্ট
সব স্মার্টফোন এখনো ই-সিম সাপোর্ট করে না। সাধারণত আইফোন, গুগল পিক্সেল, স্যামসাং, অপো বা সোনির উচ্চমানের মডেলগুলোতেই ই-সিম সুবিধা রয়েছে।

ই-সিম প্রযুক্তি এখনো সবার কাছে নতুন হলেও এর সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশাল। ধীরে ধীরে এই প্রযুক্তি আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের অভ্যাসকে বদলে দিচ্ছে। যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোও দূর হবে। সামনের দিনগুলোতে ই-সিম হতে পারে আমাদের ফোন ব্যবহারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।


সর্বশেষ সংবাদ