ঢাবির দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শাস্তির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ ইউট্যাবের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ১০:৩৮ PM , আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১০:৩৮ PM
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
আজ শুক্রবার ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে বলেন, স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুমহান ঐতিহ্যটি নস্যাৎ করার অপপ্রয়াস চলছে।
গত রবিবার ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ রচিত একটি গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। সেইসঙ্গে বইয়ের লেখক ও প্রকাশককে বইটি প্রত্যাহার করা এবং ভবিষ্যতে ড. ইমতিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের একাডেমিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহর ফেসবুক পেজে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মন্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি ওঠে। তবে অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ তার কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও আচরণ করবেন না মর্মে লিখিত মুচলেকা দেওয়ার শর্তে তার ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন সভায় মঞ্জুর করা হয়েছে।
ইউট্যাবের নেতারা বলেন, ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করা তথা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার রাখে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।’এ ক্ষেত্রে ওই দুই শিক্ষক কোনো অপরাধ করেননি। তবুও ঢাবি সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থি। এ ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে।
তারা বলেন, অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কলামে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন—এমন অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ড. মোর্শেদ প্রকাশিত নিবন্ধটি প্রত্যাহার এবং ওই পত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। তবুও অগণতান্ত্রিকভাবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
“অতএব ইউট্যাব মনে করে, এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, অধ্যাপক ইমতিয়াজ, অধ্যাপক আমানুল্লাহ ও ড. মোর্শেদ হাসান খান গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। অবিলম্বে ভিন্নমতাবলম্বীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন এবং শিক্ষা-গবেষণার সহনীয় পরিবেশ বজায় রাখতে ঢাবির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় ইউট্যাব। সেইসঙ্গে কথায় কথায় ঠুনকো অজুহাতে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধের দাবি জানান ইউট্যাব নেতারা।”