এমআইটিতে পড়বেন বাংলাদেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী উখেংচিং

উখেংচিং মারমা
উখেংচিং মারমা  © সংগৃহীত

বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমআইটিতে পড়তে গেছেন বাংলাদেশের উখেংচিং মারমা। খাগড়াছড়ি থেকে তার এমআইটি পড়তে যাওয়ার অদম্য গল্প জানান তিনি। 

উখেংচিং মারমা খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ার বাসিন্দা। তার লেখাপড়া শুরু খাগড়াছড়ির মহালছড়ির চোংড়াছড়ির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর নতুনকুঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, খাগড়াছড়ির ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এইচএসসি পাস করেন। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাস তিনেক পড়েছিলেন। পরে সুযোগ পান চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনে পড়ার। তার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু সেখান থেকেই। 

উখেংচিং বলছিলেন, ‘আমি যে পরিবার ও পরিবেশে যেসব সুযোগ পেয়েছি, পাহাড়ের বেশি ছেলেমেয়ে তা পায় না। পাহাড় শিক্ষায়, চিকিৎসায় এখনো অনেক পিছিয়ে। তাই চেয়েছি এসব ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করতে।’ 

২০১৬ সালে স্নাতক শেষ করার আগেই  যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটায় সেন্ট ক্যাথরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের আওতায় একটি সেমিস্টারে পড়তে যান। পড়ার পর জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পেশাগত জীবনে লেখাপড়ার সুযোগ কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু হাল ছাড়েননি উখেংচিং। ২০১৯ সালের কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি কোর্সে ভর্তি হন। কোর্সটি এখনো শেষ হয়নি।

আরও পড়ুনঃ ‘এ বিজয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর’

এরমধ্যেই পেলেন এমআইটিতে পড়ার সুবর্ণ সুযোগ। সেখানে তিনি পড়বেন কগনিটিভ সায়েন্স নিয়ে। তিনি বাংলাদেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম ব্যক্তি যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) স্নাতকোত্তর কার্যক্রমে ভর্তি হয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক ব্যুরোর সহায়তাপুষ্ট গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী ছিলেন।  

২০২০ সালে তাঁর বিয়ে খাগড়াছড়ির মং সার্কেলের সার্কেলপ্রধান বা রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরীর সঙ্গে। পার্বত্য তিন জেলা তিনটি সার্কেলে বিভক্ত। এর মধ্যে রাঙামাটি জেলা চাকমা সার্কেলের, বান্দরবান বোহমং সার্কেলের এবং খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের মধ্যে পড়েছে। প্রথাগত এ প্রতিষ্ঠানের অংশ হয়ে  উখেংচিং মারমা রানি হন। এখন এই প্রতিষ্ঠানের অংশ হয়ে এটি তার কাজের প্রধান জায়গা হয়ে গেছে। এর মাধ্যমেই তিনি মানুষকে সহযোগিতা করছেন। 
করোনার মধ্যে রাজা সাচিংপ্রু সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে প্রান্তিক মানুষকে সহযোগিতা করে গেছেন। ব্র্যাকের সহযোগিতা নিয়ে মেয়েদের মধ্যে ২৫ হাজার স্যানিটারি প্যাড দিয়েছেন রানি উখেংচিং মারমা।

এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণের কথাও ভাবছেন তিনি। উখেংচিং বলছিলেন, ‘আমাদের প্রথাগত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের চাওয়া অনেক। কিন্তু সেই অনুযায়ী সরকারি সহযোগিতা তো অনেক কম। মানুষ কিন্তু সেসব বোঝে না। আমি বিদেশে পড়তে এসেছি, তাদের প্রত্যাশা আমার কাছে আরও বাড়বে। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁদের আস্থা অগাধ। আমি সেই আস্থার মর্যাদা দিতে চাই। আমরা সবাই মিলে এই প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে চাই।’

আরও পড়ুনঃ নাসায় আমার স্বপ্ন পূরণের জন্যে স্ত্রী তার চাকরি ছেড়ে দেয়

ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে উখেংচিংকে অভিনন্দন জানিয়েছে এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য সেখানে তারা লিখেছে, ‘আসুন, আমরা  রানি উখেংচিং মারমাকে অভিনন্দন জানাই! 

উখেংচিং মনে করেন, পাহাড়িদের সম্পর্কে এখনো অনেকের নেতিবাচক ধারণা আছে। নারীরা সেখানে নিগ্রহের শিকার হন। বড় জনগোষ্ঠীর নেতিবাচক মনোভাবের অধিকারীদের কাছে থেকেই পাহাড়ি নারীরা চলতে-ফিরতে নিপীড়নের শিকার হন। নারীদের ওপর নিগ্রহ নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই লেখালেখি করেছেন। নিগ্রহের এসব ঘটনা বন্ধ করতে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিক্ষা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে  শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এ দুই খাতে কাজ করতে চান তিনি। পাহাড়ি মানুষের পানি ও স্যানিটেশনের কষ্ট তিনি দেখেছেন। শিক্ষার্থীদের ভাষাগত সমস্যাও তাঁর জানা। এসব বিষয়ে কাজ করার অনেক কিছু আছে বলে মনে করেন তিনি। খাগড়াছড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির এ যাত্রায় তার প্রধান উদ্দীপনা কী ছিল জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। উখেংচিং বলেন, ‘সাহসে ভর করে সবকিছু করেছি। মানুষের ভালো ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য সারা জীবন কাজ করে যাব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence