পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগ নেতার লাইভে বিব্রত সংগঠন, ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

মনির হোসেন সুমন
মনির হোসেন সুমন   © ফাইল ছবি

বাংলাদেশে ছাত্রলীগের এক নেতা পরীক্ষার হল থেকে ফেসবুক লাইভ করে দাবি করেছিলেন, তিনি পরীক্ষার খাতায় নিজ দলের পরিচয় লিখেছেন, কাজেই পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পাবেন। এ ঘটনায় বিব্রত ছাত্রলীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছে, আর সরকারও এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।

ঝিনাইদহের একটা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতার এমন আচরণের খবরে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। একজন ছাত্র কীভাবে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষার হলে গেলেন এবং কীভাবে সেখান থেকে লাইভ করলেন, সেটা মনিটর বা পর্যবেক্ষণ করার কেউ ছিল কিনা এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে গেছে তাদের নিজেদের পরিচয় দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার সঙ্গে ছাত্রলীগের নামটা আসায়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন গতকালকেই এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: পরীক্ষার হলে বসে ফেসবুক লাইভে ছাত্রলীগ নেতা (ভিডিও)

এ ধরনের আচরণের বিষয়ে ছাত্রলীগের বক্তব্যের বিষয়ে ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন, ‘‘নতুন কমিটিতে যাচাই বাছাই করে সদস্য নেয়া হচ্ছে। ভদ্র, মার্জিত যার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, মাদক সংশ্লিষ্টতা নেই তাদের নেয়ার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে চেষ্টা করেন যারা ভালো ছেলে তাদের দায়িত্ব দিতে। তার পরেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যার জন্য আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।’’

কী হয়েছিল পরীক্ষার হলে

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুক লাইভ করেন। ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মনির হোসেনকে দেখা যায় আরো কয়েকজনের খাতায় কি লেখা সেটা দেখাতে। এর মধ্যে একজনের খাতায় লেখা ছিল ‘না লিখে এ প্লাস পেতে চাই’।

মনির হোসেন নিজের খাতায় কি লিখেছেন সেটা দেখিয়ে বলেন, গ্রুপের স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোক। এই সময় তারা কয়েকজন হাস্যরস করেন। আর সেখানে শিক্ষকদের দেখা গেলেও তারা এই আচরণের কোন প্রতিবাদ করেননি।

আরও পড়ুন: পরীক্ষার হলে লাইভে আসা সেই ছাত্রলীগ নেতার কমিটি বিলুপ্ত

ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের একাডেমিক ইনচার্জ মাহাবুবুর ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম শুক্রবার সকালে সেখানে কি ঘটেছিল। তিনি বলেন ‘‘সকাল ১০ থেকে ১১টা লিখিত পরীক্ষা ভালো ভাবে হয়েছে। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিল এর পরে। তখন তাদের একটা জব শিট দেয়া হয়। সেই সময় তারা এটা করেছে।’’

কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ সরকারের

একাধিক শিক্ষক বলেছেন তারা অপ্রত্যাশিত এমন নানা ঘটনার মুখে পড়লেও সেটা নিয়ে কথা বলা বলতে চান না। এমন একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন তার কলেজে দলীয় এসব ছেলেরা তার রুমের ঢোকার সময় অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। এমন কি অনেক ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং করার জন্য অনেক সময় জানানোর প্রয়োজন মনে করে না।

এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। এসব পরিস্থিতি কীভাবে দেখছে সরকার? বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরি বলেন যেকোন স্থানে উশৃঙ্খল ঘটনা দেখলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের ইন্সট্রাকশন সব সময় কঠোর। বহিষ্কার করেছি, কোন স্থানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সেখানে আমরা কঠোর একাডেমিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা চাই ছাত্ররাও ন্যায় বিচারের প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।’’

এদিকে শিক্ষাবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এই ভিডিওটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ক্ষমতাসীনদের যেকোন অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হলে যে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় সেটা এই শিক্ষার্থীরা জানে। লাইভ চলাকালীন শিক্ষকদের নিষ্ক্রিয়তা থাকা দেখে ধারণা করা যায় সেখানে তারা চাইলেও কিছু করতে পারবে না সেটা তারা আগে থেকেই জানতো।

আরও পড়ুন: পরীক্ষার হলেই ফেসবুক লাইভে ছাত্রী, অতঃপর.....

লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন বর্তমানে ছাত্রলীগে যারা সদস্য হচ্ছেন তাদের যাচাই-বাছাই না করে কমিটিতে নেয়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। একইসঙ্গে এসব কিছু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার পরিবেশ এরাই তো নষ্ট করছে। শিক্ষকদের মধ্যে একটা গ্রুপ আছে যারা মান সম্মানের ভয়ে কিছু বলে না কারণ তাদের উপর এরা চড়াও হবে এই ছাত্র নামধারী ব্যক্তিরা। এবং সব কিছুই হচ্ছে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে। এরা যে অপরাধ করে এটা কি জানে না থানা -পুলিশ? এরা কিছু বলে না কারণ তারা জানে এদের উপরে মুরুব্বি আছে, বড় ভাই আছে।

ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট বলছে এই ঘটনা কীভাবে হল সেটা দেখতে তারা তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফলের পর ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence