কলেজছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’: ছাত্রদলের দাবি অভিযুক্ত আগেই বহিষ্কার

অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা এবং ‘আত্মহত্যা’ করা সম্পা ওরফে ইতি দাস
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা এবং ‘আত্মহত্যা’ করা সম্পা ওরফে ইতি দাস  © টিডিসি সম্পাদিত

পটুয়াখালীর বাউফলে বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়ে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা হৃদয় রায়হানের নেতৃত্বে কয়েকজন তরুণের হাতে হেনস্তার শিকার হন এক কলেজশিক্ষার্থী। ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সম্পা ওরফে ইতি দাস (১৯)। তিনি দাসপাড়া গ্রামের সমীর দাসের মেয়ে এবং বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানা যায়, তিনি বাউফল পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সাকিবুজ্জামান রাকিবের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এ ব্যাপারে সাকিবুজ্জামান রাকিব দাবি করেছেন তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: দুপুরে ছাত্রদল নেতার হাতে হেনস্তা, রাতে ‘আত্মহত্যা’ কলেজছাত্রীর

পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব জাকারিয়া আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, অভিযুক্ত হৃদয় রায়হান বাউফল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। হৃদয় রায়হানকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা চাই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এই বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক শামীম চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, হৃদয় রায়হান বাউফল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সিনিয়র নেতার সাথে বেয়াদবি করার কারণে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, দল থেকে বের করার পরও সেই যদি দলের প্রভাব খাটিয়ে কিছু করে তার দায়ভার দল নেবে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঘুরতে বের হন ইতি দাস। দুপুর ১২টার দিকে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যান। তখন হৃদয় রায়হান ও তার সঙ্গীরা তাদের উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে হৃদয় ইতির বন্ধুকে টেনে রেস্তোরাঁর বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং মারধর করেন। ইতি বাধা দিলে তাকেও হেনস্তা করা হয়। পরে হৃদয় ইতির বাবা-মাকে ফোন করে ডেকে পাঠান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক মো. শাহিন বলেন, ‘এ ঘটনার মূলহোতা হৃদয় রায়হান। সোমবার দুপুরের দিকে এক তরুণ থানায় এসে জানায় তার মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে হৃদয় ও তার সহযোগীরা। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর হৃদয় আমাকে বলে এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ঘটনাটি যে নারী সংক্রান্ত বিষয়, তা আমাকে কেউ জানায়নি। পরে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় আনার পর জানলাম ঘটনাটি নারী সংক্রান্ত। বিকালে তাদের ছেড়ে দেওয়ার পর এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু অভিযোগ দিতে রাজি হননি তারা।’

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ইতির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এখনও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ পাইনি। স্বজনরা অভিযোগ দিলে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, রাকিব ও রায়হান নামের দুজনের বিরুদ্ধেও স্থানীয়ভাবে অভিযোগ পেয়েছি, তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।

এদিকে ইতি দাসের চাচাতো ভাই বলেছেন, ‘নিজের সামনে বন্ধু ও তাকে হেনস্তা এবং পরিবারকে অপদস্থ হতে দেখে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ইতি। ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রদল নেতা সাকিবুজ্জামান রাকিবের ঘনিষ্ঠজন এবং দলের নেতাকর্মী। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো। উল্টো ওই ঘটনার পর থেকে ইতির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন। ফলে থানায় মামলা পর্যন্ত করেননি।’

অভিযুক্ত হৃদয় রায়হান দাবি করেছেন, ‘ওই তরুণী ও তার বন্ধুকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়েছি আমরা। পরে তাদের পরিবারকে খবর দিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা না এসে উল্টো পুলিশকে পাঠিয়েছিল। এতে বিষয়টি জানাজানি হয়। একপর্যায়ে মেয়েটা কান্না করতে করতে থানা থেকে বাসায় চলে যায়।’


সর্বশেষ সংবাদ