পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের চাহিদামতো রাজনীতিতে ‘অভ্যস্ত’ ছাত্রদল-শিবির

লোগো ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির
লোগো ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির  © টিডিসি সম্পাদিত

দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনে অতিষ্ঠ দেশের জনগণ। এ সময় ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারিয়েছে বহু শিক্ষার্থী—কেউ নিজ দলের, কেউ ভিন্ন মতাদর্শের, কেউবা সাধারণ শিক্ষার্থী। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হাজারো ছাত্র। ছাত্রলীগের দমন-পীড়নের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতির প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব জন্ম নিয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ-অসন্তোষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রুপান্তরিত হয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। এরপর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের ফলে দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির চিত্রও নতুনভাবে রূপ নিতে শুরু করে।

নতুন বাস্তবতায় ছাত্ররাজনীতি

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে সংগঠনের কমিটি দিতে পারেনি ছাত্রদল, শিবিরসহ কোনো ছাত্রসংগঠন। হল-ভিত্তিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা বাধার মুখে পড়ছে। তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে তারা শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ছাত্ররাজনীতির একটি নতুন ধারা অনুসরণ করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি পছন্দ করেন না। তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতি জরুরি। বিশেষ করে, হলগুলো রাজনীতিমুক্ত থাকলে আশা করা যায়, গণরুম ও গেস্টরুমের মতো ভয়াবহ রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর ফিরে আসবে না।

নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যে ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করছেন, আমরা সেই ধরণের রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা নিজেরাই হলে গতানুগতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম বর্জন করেছি। এতে শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি ছাত্ররাজনীতি বজায় রাখা, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করবে না। ছাত্রলীগ যা করেছে, শিক্ষার্থীদের যেন সে ধরনের ভয় বা উদ্বেগ আর না থাকে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্ররাজনীতি মূলত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, চাওয়া-পাওয়া এবং প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। যেহেতু শিক্ষার্থীরা আগের ধাঁচের ছাত্ররাজনীতি চান না, তাই আমাদেরও সে অনুযায়ী মানসিকতা পরিবর্তন করতে হয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময় শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে। আমরা জোরপূর্বক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না এবং কাউকে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চাই না।

তিনি আরও যোগ করেন, এখন সময় এসেছে নতুন নতুন ধারণার ভিত্তিতে ছাত্ররাজনীতি করার। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হোক, মেধাভিত্তিক রাজনীতি হোক। আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি মেডিকেল সেবা চালু করেছি। ভালো কাজ যে কেউ করতে পারে, এর জন্য হল দখল বা শক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই। এখন রাজনীতির ধরন হচ্ছে আইডিয়ার রাজনীতি, মেধার রাজনীতি এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীরা সুস্থ ধারার রাজনীতি চাইছেন, আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই।

গণরুম ও গেস্টরুমের ভয়: শিক্ষার্থীদের শঙ্কা

যদিও ছাত্রদল ও শিবিরের নেতারা নতুন ধারার ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তবু হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি আবার সক্রিয় হলে গণরুম ও গেস্টরুমের মতো ভয়াবহ সংস্কৃতি ফিরে আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর ভূমিকাই নির্ধারণ করবে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর কতটুকু আস্থা রাখতে পারবেন। সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি কেবল তখনই টিকে থাকবে, যখন শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence