জামানত হারালেন প্রশ্নফাঁসে জড়িত ইডেনের সেই ছাত্রলীগ নেত্রী রুপা

মাহবুবা নাছরিন রূপা
মাহবুবা নাছরিন রূপা  © ফাইল ফটো

দু’বছর আগে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার মাহবুবা নাছরিন রূপা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে গিয়ে জামানত হারিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ফলাফল বিশ্লেষণে বিষয়টি জানা যায়।

নির্বাচনে রূপা কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ১৫০। এই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭১ জন। সেখানে তিন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ঝুলিতে মোট প্রদত্ত ভোট ছিল ৬৮ হাজার ৫৪৪। এর মধ্যে বৈধ ভোট ছিল ৬৫ হাজার ১২৫টি। 

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুকূলে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। আর ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। নির্বাচনে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

এই বিধি অনুযায়ী রূপাকে জামানত রক্ষার জন্য পেতে হতো ন্যূনতম ১০ হাজার ২৮২ ভোট। তা না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া অর্থ খোয়াতে হচ্ছে তাকে।

চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’বছর আগে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রূপা। এ ঘটনায় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের পর তিনি দুপচাঁচিয়া উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হন। এছাড়া ইডেন মহিলা কলেজে ‘সিট বাণিজ্য’ ও ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর হামলায় জড়ানোর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

রূপা রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকার সময় ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর কলেজের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ‘সিট বাণিজ্য’কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তখন কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য সাবিকুন্নাহার তামান্নার ওপর হামলা চালিয়ে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে মাহবুবা নাসরিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরপরই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

রুপা ২০১৯ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্যপদ পান।

২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তাকে তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় তার কাছ থেকে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, মুঠোফোন, অডিটর পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয় বলে জানানো হয়। এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ থেকে মাহবুবাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এক দিন পর মাহবুবাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। ওই বছরের ৫ জুন ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে মাহবুবাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতিতে জড়িত। ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ প্রার্থীর সঙ্গে চুক্তি করেছিল চক্রটি। এর মধ্যে রুপার ছোট ভাই রানাও আছেন। ২৪ জানুয়ারি ডিবি গুলশান বিভাগের উপপরিদর্শক শহিদুর রহমান রাজধানীর রমনা মডেল থানায় রুপাসহ সহযোগীদের আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। দুই দফায় ছয় দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রুপা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে গত বছরের ৪ জুন তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাকারিয়াস দাস আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে রুপাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আদালতে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ তদন্ত শেষে মাহবুবাকে অব্যাহতি দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence