ক্রিকেটের মাঠ থেকে হাসপাতালের বেডে ঢাবি শিক্ষার্থী মোশাররফ

ক্রিকেটার মোশারফ হোসেন রুবেল
ক্রিকেটার মোশারফ হোসেন রুবেল

বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি পরিচিত নাম মোশারফ হোসেন। ডাকনাম রুবেল। সবাই তাকে ক্রিকেটার হিসেবে চিনলেও তার আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। এক সময় বল হাতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে ব্রেন টিউমারের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই করছে বাঁহাতি এ স্পিনার।

মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে তার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর) ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। এর পরের বছর এই ইনস্টিটিউট পরিবর্তন করে ইতিহাস বিভাগে চলে যান।

তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় হলেও তার বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরেই। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা খুব পছন্দ করতেন। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে তার ক্রিকেট জগতে পা রাখার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলে যোগ দেন তিনি।

এ বিষয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু জাহিদ চৌধুরী বলেন, রুবেলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরো সময়টাই ক্রিকেটময় ছিল।যার কারণে ২০০৭ সালে সে জাতীয় ক্রিকেট দলে ডাক পায়। খুবই নম্র,ভদ্র একটা ছেলে ছিল।

২০০৮ সালে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার মধ্য দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তাঁর। তিন ম্যাচ ওয়ানডে খেলে মাত্র ১ উইকেট পাওয়ায় দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর তাঁকে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে নিয়েছিল দল। কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়ে আবার বাদ পড়েন। ২০১৬ সালে আট বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নেমে ৩ উইকেট পান। দলকে জেতাতে বড় ভূমিকাও রাখেন তিনি। কিন্তু পরের ম্যাচে উইকেট না পাওয়ায় আবার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন।

জাতীয় দলে জায়গা হারালেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচে তার ঝুলিতে ৩৯২ উইকেট। ব্যাট হাতে দুইটি শতক ও ১৬টি অর্ধশতকে ৩৩০৫ রান তার সংগ্রহে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৯ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে।

আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষার্থী ভাইকে বাঁচাতে লিভার দেবেন জাবি ছাত্রী

২০১৯ সালে ব্রেইন (মস্তিষ্কে) টিউমার ধরা পড়লে মাঠ থেকে ছিটকে পড়েন মোশাররফ রুবেল। দেড় বছর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়া শুরু করেছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয় কেমোথেরাপি দেয়া। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন তিনি।

অবস্থার উন্নতি না হওয়াতে গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের একটি হাসপাতালে আবারও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রুবেলের ব্রেন টিউমার অপসারণ করা হয়। তাতেও খুব একটা উন্নতি হয়নি। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ১৪ তারিখ রাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।

চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হওয়ায় এক সময় নিজের ফ্ল্যাট বিক্রির কথাও জানিয়েছিলেন ৩৯ বছর বয়সী ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পরিচিত মুখ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং খেলোয়াড়েরাও তাঁর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।

তবে এখন মোশাররফের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানান তার সহধর্মিণী ফারহানা চৈতি। তিনি বলেন, এখন একটু উন্নতি হয়েছে। যদি আরো ভালো হয় তাহলে দুই একদিনের মধ্যে ক্যাবিনে শিফট করবে।


সর্বশেষ সংবাদ