বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন নিচ্ছেন আ’লীগ নেতার স্ত্রী
বিদ্যালয়ে না গিয়েও মাসের পর মাস বেতন তুলছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম। সাজেদা বেগমের স্বামী সাইদুজ্জামান মামুন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ায় তিনি বেতন উত্তোলন করছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সাজেদা বেগমের ছেলে স্বর্গ ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছেলের লেখাপড়া ও দেখাশোনা করার জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে স্থায়ীভাবে থাকেন। কিন্তু তিনি যেখানকার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত সেই রাঙ্গাবালি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্ররা তাকে চিনেও না। কারণ এই শিক্ষক চলতি বছরে কোনোদিন ক্লাসরুমে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করানোর জন্য উপস্থিত হননি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে সাজেদা বেগম নয় মাস স্কুলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে জানিয়েছেন, চলতি বছরে একদিনও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হননি। এর সত্যতা প্রমাণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জানুয়ারি-এপ্রিল চার মাসের হাজিরা খাতায় একদিনও তার স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় রয়েছেন। ঈদুল ফিতরের পর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। তার অবর্তমানে হাজিরা সিটে যিনি প্রক্সি স্বাক্ষর দিতেন তিনমাস সেই প্রবীর চন্দ্র রায় বিনা ছুটিতে একমাস ধরে ভারতে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের জানান, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে বেতন-ভাতা তুলছেন শিক্ষক সাজেদা বেগম।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সাজেদা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি টাইফয়েড আক্রান্ত, এজন্য দেড়মাস ধরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছি। এরআগে স্কুলে উপস্থিত ছিলাম।‘হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর কেন নাই’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভুলে গেছি স্বাক্ষর দিয়েছি কী না।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, হাজিরা খাতায় শিক্ষক সাজেদা বেগমের স্বাক্ষর আছে কী না তা না দেখে বলতে পারবো না। তার ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তাই তিনি ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ছুটি নিয়েছেন।‘দেড়মাস ছুটি দেওয়ার এখতিয়ার আপনার আছে কী না’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদ ছুটি দিতে পারেন। ম্যানেজিং কমিটির কাছে ছুটির জন্য তিনি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান এ সাংবাদিকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে ব্যাপারটি মিটমাট করার প্রস্তাব দেন।
রাঙ্গাবালি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোকলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটা আমি জানি। কিন্তু বিচ্ছিন্ন জনপদ দূর থেকে এসে এখানে চাকরি করি, তাছাড়া অভিযুক্তের স্বামী বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ জাঙ্গাগীর আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের উপ পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এই শিক্ষকের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে পরিপত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।