বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে নারী শিক্ষার্থী
দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বেসরকারি খাতে শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪৯ হাজার, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী।
বিবিএস এর প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে নারী শিক্ষার্থীর হার ছিল ৫১ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা পুরুষের তুলনায় সামান্য বেশি। নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিকে বিশেষজ্ঞরা নারী শিক্ষায় অগ্রগতির ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
বিবিএস-এর তথ্যে আরও দেখা গেছে, ২০২২ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার এবং নারী শিক্ষার্থী ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৭ হাজার। নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ২০২৩ সালেও ধরে রাখার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে।
শিক্ষাবিদদের মতে, এই প্রবণতা দেশের নারী ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষানীতির সফলতার একটি প্রতিফলন। তবে তারা বলেন, এখন সময় এসেছে এই অংশগ্রহণকে মানসম্মত শিক্ষায় রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যয়যোগ্য আয় ৭৩ হাজার কোটি টাকা
২০২৩ সালে দেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে ব্যয়যোগ্য মোট আয় ছিল ৭৩ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শিক্ষা খাতের এই আয় একই হারে সঞ্চয় হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেশি।
২০২৩ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সক্ষমতার নিরিখে এই খাতের নিট লেন্ডিং বা নিট ঋণ প্রদান দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ২৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিক্ষা খাতের এমন প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক সক্ষমতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।
বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষা খাতে আয় ও উদ্বৃত্তের এই বৃদ্ধি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তবে, এ খাতে আয় বাড়লেও শ্রমিকের অংশ কমে যাওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিবিএস-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালে শিক্ষা খাতে মোট মূল্য সংযোজন হয়েছে ৭৭ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। একই বছর খাতটির মোট উৎপাদন ছিল ৮৫ হাজার ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, মূল্য সংযোজনের মধ্যে শ্রমিকদের অংশ আগের বছরের ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ থেকে কমে ৩৭ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এই পরিবর্তন আয়ের বৈষম্যের ইঙ্গিত বহন করছে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষা খাতে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ বিষয়ে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই জরিপের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতের বিভিন্ন দিক, যেমন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা আউটপুট, মধ্যবর্তী ভোগ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় এবং সঞ্চয়সহ প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।