রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ, তিন লাখ শিশু পড়ালেখার বাইরে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৫:৪৭ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৬ PM

বিদেশি মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ার ফলে তহবিল সংকটের কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। যার ফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে। এতে বিপদে পড়েছে প্রায় তিন লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ। বর্তমানে পড়ালেখার বাইরে রয়েছে এ সকল শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অনুদান বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় এই সংকট দেখা দেয়।
ইউনিসেফের এক তথ্যমতে, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মোট শিশুর সংখ্যাই ৪ লাখ। ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ সাল পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এসব শিশুদের মধ্যে স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৪ জন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ইউনিসেফের ১১৭৯ কর্মী চাকরি হারালেন
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে জানায়, জুনের শুরুতে সহায়তার ঘাটতির কারণে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও সেভ দ্য চিলড্রেন পরিচালিত প্রায় ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে শিবিরের শিশুরা এখন এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে জুন ২০২৫ সালে এসে মাত্র ১২ মিলিয়নে দাঁড়িয়। এ কারনে এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের কক্সবাজার শাখার পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শিশুদের কাছ থেকে শিক্ষা কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা কারও নেই। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই দুঃখ-কষ্ট আর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। কিন্তু সহায়তার অভাবে আমাদের হাজার হাজার শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ করতে বাধ্য হতে হয়েছে।’
এইচআরডব্লিউ বলছে, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত যেসব শিক্ষাকেন্দ্র এখনও চালু রয়েছে, সেগুলোর কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। এর ফলে এসব স্কুল বিদেশি অনুদান পেতে পারছে না, আবার শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিক্ষা কোনো স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিশুরা ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুশ্রম, মানবপাচার ও গ্যাং সহিংসতার মতো বিপজ্জনক পরিবেশে।
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষণা
এই সংকট সমাধানে সংস্থাটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন শরণার্থী শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা না দেওয়া হয় এবং স্থানীয় মানবিক শিক্ষা উদ্যোগগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এসব স্থানীয় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু গবেষক শাহরিয়ার ইয়াসিন খান বলছেন, বাংলাদেশের আগের সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী স্কুল প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল না। কারণ, তারা মনে করতেন এসব স্কুল রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, শিশুদের শিক্ষার অধিকার অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদ ও ১৯৫১ সালের শরণার্থী সনদের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে শরণার্থী শিশুদের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২, আক্রান্ত কত?
এর আগে ৩ জুন (মঙ্গলবার) মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের তহবিল সংকটের কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার জন্য নিয়োজিত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১ হাজার ১৭৯ জন কর্মীর সঙ্গে ইউনিসেফের অংশীদারদের থাকা চুক্তি বাতিল করেছে। এই শিক্ষকদের মধ্যে ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও অংকনের (ড্রয়িং) শিক্ষকরা রয়েছেন।