বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে শিক্ষার্থীদের টিকাদানই একমাত্র বাধা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১, ০৯:৪৪ AM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২১, ১০:১৮ AM
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলতে পারবে। তবে শর্ত হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সবাইকে টিকার আওতায় আসতে হবে। খোলার পর মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সে জন্য খোলার আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া ও না-দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র ছক আকারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) পাঠাতে হবে। এই হিসাব সন্তোষজনক হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমোদন দিতে পারবে ইউজিসি।
তবে যাঁদের টিকা কার্যক্রম শেষ হবে না, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হবে। দীর্ঘ দেড় বছর প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থীদের টিকাদান সম্পন্ন করা। এই লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও এখনো টিকার জন্য নিবন্ধন করেননি তাঁদের তালিকা আগামী সাত দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও টিকা নিতে পারেননি তাঁদের টিকাদান সহজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে টিকাদানকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব জেলায় একটি বা প্রয়োজনে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি সহায়তায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শুধু শিক্ষার্থী ও
শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য টিকাদানকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই কিন্তু বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এরপর মন্ত্রণালয়ে তাঁদের জন্য দ্রুততম সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চাইবে।
ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় সোয়া দুই লাখ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তার মধ্যে দেড় লাখের মতো শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
এদিকে, শুক্রবার (২৭ আগস্ট) গাজীপুরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গতকালই সবাইকে নিয়ে একটি যৌথ সভা করেছি, সেখানে আমরা কী করে আগামী এক মাসের মধ্যে… যত দ্রুত সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের শিক্ষার্থীদের যারা ১৮ বছরের বেশি, যাদেরকে টিকা দেওয়া যাবে, তাদেরকে টিকা দেয়া শেষ করা…।
“টিকা দেওয়ার পরে যেহেতু আরও সপ্তাহ দুয়েক লাগে ইমিউনিটি পেতে, একটা পর্যায়ে আসতে। অর্থাৎ আমরা অক্টোবরের মাঝামাঝির পরে আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুলে দিতে পারব”।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে ৪ সিদ্ধান্ত
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে চারটি সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক থেকে। সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে নানা মহলের চাপের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই সভা হয়।
সভায় চলমান ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও কীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে, তানিয়ে চারটি কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয় কমিটির পরামর্শ নেওয়া: এতদিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে আসার জন্য অপেক্ষা করা হলেও এখন তা থেকে সরে এসেছে মন্ত্রণালয়।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার কম থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘ ছুটির বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ সম্ভাব্য সব নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে সরকার ‘সম্পূর্ণ সচেতন’।
সেজন্য সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি থাকলেও ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়, সে বিষয়ে কোভিড বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে। তাদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে যৌথ বৈঠক করবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তদারকি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ‘স্কুল রিওপেনিং প্ল্যান’ তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়টি তদারক করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় 'চেকলিস্ট' প্রণয়ন করা হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই ‘চেক লিস্ট’ প্রণয়ন হবে বলে জানানো হয়েছে।
টিকা দিতে ইসির শরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী এখনও টিকার জন্য নিবন্ধন করেনি, তাদের তালিকা আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, কিন্তু বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে তাদের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দ্রুততম সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চাইবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন: যেসব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীর এখনও টিকা নেওয়া বাকি, তাদের টিকাদান সহজ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রয়োজনে সব জেলায় এক বা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শুধু শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের জন্য টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনারও ব্যবস্থা করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।