১৫ বছরেও শেষ হয়নি জবির নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ
- সাগর হোসেন, জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৭:২৭ PM , আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৭:২৭ PM
পনেরো বছরে চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানাধীন নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হয়নি। কাজ সম্পূর্ণ করতে বর্তমানে চলছে ৫ম মেয়াদের কাজ। অবকাঠামোসহ শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমের সংকট সমাধান করতে কাজ শুরু হয় নতুন একাডেমি ভবনের। কিন্তু বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানাধীন এ ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কাজ ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালে চতুর্থ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ৩০% কাজ বাকি থাকতেই ২০২০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৫ম মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরু করা হয়, ৫ম মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মিতব্য ১৩ তলা এই ভবনের ৯ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ। বাকি চার তলার কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন এই ভবনের ৯ তলা পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ। বাকি ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তলা গুলোতে টাইলস লাগানো, রং করাসহ আরও বেশকিছু কাজ বাকি থেকে গেছে।
এ বিষয়ে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেপি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার বলেন, প্রথম দিকে ভবনের কিছু ত্রুটি ও জটিলতা থাকার কারণে কাজ দীর্ঘায়িত হয়েছে। আমরা এই প্রকল্প পাই ২০১৪ সালে। কিন্ত এ কাজ শেষ না হতেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে আমরা পঞ্চম মেয়াদে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছি। তবে আমি আশা করি চলতি বছরের মার্চ মাসেই এই একাডেমিক ভবনের কাজ আমরা সম্পূর্ণ করতে পারব।
জানা যায়, ২০১৪ সালের শেষের দিকে তৃতীয় মেয়াদে টেন্ডার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন কাজটি পায় দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেপি) নামের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তাদের ওয়ার্ক পারমিট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সময় লেগে যায় ৬ মাসের মতো। প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে গিয়ে ভবনের ভিত্তিতে দুর্বলতার বিষয়টি টের পায়। তাদের কাজ করার সময় নতুন ভবনের বেসেইমেন্টে একটি পিলারে ফাটল দেখা দেয়।
তখন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বুয়েটের অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের দ্বারস্থ হলে তারা ভবনের ভিত্তি ও মাটি পরীক্ষা করে ভবনের ভিত্তির দুর্বলতা খুঁজে পান। তখন তারা ১৩ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য প্রশাসনের কাছে সিদ্ধান্ত জানান।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০১১ সালে ১ জুলাই মাসে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৪ সালে এসে তৃতীয় মেয়াদে কাজ শুরু করে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেপি) নামের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমি খোঁজ খবর রাখিনা। এটা পরিকল্পনা, উন্নয়ন দপ্তরের কাজ। তারা এ বিষয়ে কথা বলতে পারবে।
জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনার, উন্নয়ন, ও ওয়ার্কাস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানিনা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়ে দিছে এখন তারা জানে। এ বিষয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়াররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আমি এখানে নতুন পূর্বের কাহিনী আমি ওতো জানিনা। আর চতুর্থ মেয়াদের লেটার এখনও আমার হাতে আসেনি। তবে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ২০ তলাবিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণে সরকার ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই বছর প্রথম দফায় ভবনটির ৭ তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজের জন্য ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ভবনটির প্রথম দফার এ নির্মাণ কাজ নিয়েও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটির নির্মাণ কাজ করেন। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় কয়েক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়।
তখন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রশাসন জানিয়েছে, ১৩ তলা পর্যন্ত এ ভবনের সম্প্রসারণ করা যাবে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন টেন্ডার আহ্বান করে। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই নির্মাণ কাজের জন্য আটদফা টেন্ডার আহ্বান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি।
পরে যখন ২০১৪ সালের শেষের দিকে তৃতীয় মেয়াদে টেন্ডার আহ্বান করা হয় তখন যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে তারা ১৯-২৯ শতাংশ অধিক মূল্যে দরপত্র দাখিল করায় তা অনুমোদন হয়নি। পরে এ বছরের শেষের দিকে কাজটি পায় কৌশলী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দ্যা বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেপি) নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠান টানা ২ মেয়াদে ৬ বছর থেকে কাজ করেও এখনো কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি।