গণরুমে কেমন কাটছে দিন?

  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের গণরুম। জায়গা অনুপাতে শিক্ষার্থী বেশি। পা ফেলার জায়গাটিও হয় না মাঝে মাঝে। আছে বিস্তর অভিযোগ। তবে সব অভাব অভিযোগ ছাপিয়ে গণরুম থেকেই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বলছেন প্রথমে চুপচাপ থাকলেও কেটেছে অন্তমরখীতা, কমেছে একাকিত্ব। আরও কি কি অভিজ্ঞতা হচ্ছে সেসব জেনে জানাচ্ছেন ‘সুমাইয়া আক্তার’।

একাকিত্ব কমেছে
একাকীত্ব কমে ভালো সময় কাটে গণরুমে। এখানে রয়েছে ধর্মচর্চার বাঁধাহীন পরিবেশ। নামাজের উদ্দেশ্যে দলে দলে সবার নামাজ কক্ষে যাওয়া এবং সালাম ও কুশল বিনিময়ের দৃশ্য আমার কাছে স্বর্গীয় ও গণরুমের চমৎকার মুহূর্ত।

তিনি আরো বলেন, ডাইনিংয়ের খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের তাই প্রশাসনের যথাযথ তদারকি দরকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিনিয়রদের বাড়াবাড়ি চোখে পড়ে যা মানসিকভাবে প্রভাব রাখে। কিন্তু আমি গণরুমকে একটি মুক্তচিন্তা চর্চার কেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করতে চাই। ফাহিমা খাতুন, ২য় বর্ষ, সমাজকর্ম বিভাগ

রাজনীতি মুক্ত পরিবেশ
পাঁচ মাস ধরে গণরুমে আছি এবং মানিয়ে নিয়ে বেশ ভালোই আছি। গণরুম সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত এবং নিজের মত থাকতে পারছি। হল থেকে ডিপার্টমেন্ট কাছে হওয়ায় ক্লাশ বিরতিতে হলে ফেরা যায় যা মেসে থেকে সম্ভব হতো না। সারাদিন ক্লাশ শেষে হলে বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়। কিন্তু এখানে প্রাত্যহিক জীবনে ব্যক্তি উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা কম যা আরো বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।
সারাবান তহুরা ওয়াল জান্নাতী, তৃতীয় বর্ষ, উর্দূ বিভাগ

পরিবেশ অনুযায়ী খাপ খাইয়ে নিতে শিখছি
কথা বলাও যে শেখার বিষয় তা এখান থেকে শিখেছি। যারা অন্তর্মূখী তাদের মিশতে শেখার একটি সুবিশাল পরিমন্ডল হতে পারে গণরুম। মাঝে মাঝে অযত্ন ও অবহেলায় গণরুম অপরিষ্কার ও বসবাস অযোগ্য হয়ে ওঠে। গরমকালে এত মানুষের মাঝে থাকাটা সত্যিই কষ্টকর। তবে গণরুমে থেকে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস। গণরুমকে সহজ করে নিতে চাই, কঠিন করে নিলেই কঠিন হবে। চিন্তার উন্মুক্ত পরিসর না পাওয়া গেলেও এত মানুষ একসাথে বসবাসের সুযোগ গণরুম ব্যতিত জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই পাওয়া সম্ভব নয়। আত্মত্যাগ, সমঝোতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সুন্দর যাচ্ছে গণরুম জীবন। ইসরাত জাহান, তৃতীয় বর্ষ, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ

উপভোগ করছি এই পরিবেশ
হলে নতুন পরিবেশে এসে প্রথমদিকে চুপচাপ থাকতাম। সময়ের সাথে সাথে সবার সঙ্গে মানিয়ে বেশ উপভোগ করছি গণরুম। গণরুমের কিছু বঁাধাধরা নিয়ম শৃঙ্খলা রয়েছে যা পড়াশোনা উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। যদিও গণরুমে অনেকগুলো মানুষ একসাথে থাকি তবুও এখানকার সুযোগ-সুবিধা মেসের চেয়ে অনেক বেশি। এখানে আছে রান্নার সুবিধা, আছে নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার সুযোগ। রয়েছে সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনের জন্য অনুশীলন কক্ষ।  এসব সুবিধার পাশাপাশি আছে বেশ কিছু অসুবিধাও। পাঠকক্ষের আসন সংখ্যা সীমিত, ডাইনিং-এ নিম্নমানের খাবার, সব জায়গায় মশার উপদ্রপ ইত্যাদি। তিনি হেসে আরো যোগ করেন, এখানে ফোন চার্জ দিতে হলেও সিরিয়াল মেনে চলতে হয়। তবে গণরুম জীবনে আমাকে কখনো অভুক্ত দিন কাটাতে হয়নি। এখানে বড়-ছোটদের সম্পর্ক অনেক বেশি আন্তরিক। যেকোনো সমস্যা সমাধানে বড় আপু ও সহপাঠী বন্ধুদের সহযোগিতা অব্যক্ত। হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বেশ ভালোই যাচ্ছে গণরুমের জীবন। তামান্না শরীফ, দ্বিতীয় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ

গণরুমে কারোরই মন খারাপ থাকে না
একাকিত্ত্ব কমে হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরী হয় বড়-ছোট সকলের মাঝে। সারাবছর খেলাধুলা, আড্ডা, গঠনমূলক আলোচনা ও পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে শিক্ষার্থীরা। এখন গণরুমে ওঠা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তবে একই বিছানায় দু’জন করে থাকাটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এমতাবস্থায় প্রশাসনের উচিত আসন সংখ্যা বাড়ানো। গণরুম কেন্দ্রিক আমার যে প্রত্যাশা তার ত্রিশ শতাংশও পূরণ হয়নি। চারুকলা অনুষদের মেয়েদের জন্য নেই কোন বাড়তি সুবিধা। গণরুমে চারুকলার কারোরই থাকা উচিত নয় যদি সে সত্যি কাজ করতে চায় বা শিখতে চায়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গণরুম ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু জীবন অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়। জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে হলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর গণরুমে থাকা উচিত। তানজিদা আক্তার তানিয়া, ৩য় বর্ষ, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগ।

 


সর্বশেষ সংবাদ