বেরোবি উপাচার্যের আশ্বাসের ৭ মাসেও নেই মামলা, নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধাদের ওপর হামলাকারীরা এখনো অধরা। হামলাকারীদের ওপর মামলা করতে উপাচার্যের আশ্বাসের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

আবাসিক হল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পরও কোনো মামলা হয়নি। এতে ন্যায় বিচারের আশায় থাকা শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা। এ ছাড়া নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা ভুগছেন তারা।

গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় আবু সাঈদ হত্যায় জড়িত অভিযোগে দুই শিক্ষক ও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী, হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছিল উপাচার্য। কিন্তু তার আশ্বাসের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এর কোনো বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি।

অভিযুক্ত  ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তালিকায় রয়েছে, ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি পমেল বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহাফুজ, সংগঠনের কর্মী ধনঞ্জয় কুমার টগর, গ্লোরিয়াস (ফজলে রাব্বি), বাবুল, বিধান, তানভীর, আদুল্লাহ আল নোমান খান, রিফাত, ফারহাদ হোসেন এলিট, মোমিনুল, আরিফুজ্জামান ইমন, গাজীউর, শাহিদ হাসান ও মামুন।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আবু সাঈদ হত্যার দিনে শিক্ষক আসাদ মন্ডল এবং মশিউর রহমানসহ বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঘটনাস্থলে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই এখনো প্রকাশ্যে অফিস করেন। সাবেক উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার শাহিন মিয়া ওরফে শাহিন সর্দার, পেনশন শাখার উপপরিচালক রিয়াজুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর নুরুজ্জামান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের কর্মচারী বিপ্লব, বহিষ্কৃত সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুল ইসলাম, পরিবহন পুলের উপপরিচালক তাপস কুমার গোস্বামী,তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুম খান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মচারী ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মাহবুবার রহমান, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার কর্মচারী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম মিয়া, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার উপরেজিস্ট্রার হাফিজ আল আসাদ রুবেল, মার্কেটিং বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর আহসান হাবীব তুষার, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সেশন অফিসার এ কে এম রাহিমুল ইসলাম দিপু, প্রক্টর অফিসের কর্মচারী মো. আপেল ও সংস্থাপন শাখা-১-এর কর্মচারী সবুজ মিয়াকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা এবং বিচারহীনতার এই চিত্র শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থী মো: মাহাবুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের ন্যায্য বিচার দেওয়ার কথা বলেছিল। হামলাকারীদের ওপর মামলা করতে উপাচার্যের আশ্বাসের দুই মাস গেলেও সেই আশ্বাস কেবল কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল। আমরা ন্যায় বিচার চাই, কোনো আশ্বাস নয়। হামলার ভিডিও, প্রমাণ সব থাকার পরও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? প্রশাসনের এই নীরবতা আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাচ্ছে।’

শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা তাওহীদুল হক সিয়াম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের ভবিষ্যৎকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। এখন ন্যায়বিচার আদায়ের জন্য আবার আন্দোলনে নামা ছাড়া কোনো পথ দেখছি না। বারবার আশ্বাস শুনতে শুনতে আমরা এখন হতাশ।’

শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা বেলাল হোসেন বলেন, ‘হামলার পরের দিন যেভাবে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, আজও সেই প্রতিবাদের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের দায় এড়িয়ে যাওয়া দুঃখজনক। আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচার নিয়ে আর নয়ছয় দেখতে চাই না আমি।’

শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের ওপর মামলা করতে চাইলে আমরা সাক্ষীর একটা তালিকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের অবহেলার জন্যই এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা আবারো আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শওকাত আলী বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এ বিষয়ে জুলাই-আগস্টে আহতদের সাক্ষীও আমরা নিয়েছি। মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এর আউটপুট পাওয়া যাবে। মামলা করার জন্য তখনই আমি জাতির উদ্দেশ্যে বলেছি। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে দেরি হচ্ছে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence