আওয়ামী শিক্ষকদের অংশগ্রহণ, ইবি ভর্তি কমিটির সভা পণ্ড
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪২ PM , আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৭ PM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, উপাচার্যের সভাকক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ক্ষুব্ধ উপস্থিতি এবং নিরাপত্তাবিধান না করেই আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের সভায় অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট হট্টগোলে পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে পণ্ড হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভা। সভায় আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা কোন অনুষদের মাধ্যমে নেওয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলার সভাকক্ষে এই ঘটনা ঘটে। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অংশগ্রহণ কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে উপায় না পেয়ে সভা সেখানেই স্থগিত করে পেছনের দরজা দিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে প্রক্টরিয়াল বডির উপর ক্ষোভ ঝাড়েন উপাচার্য।
জানা যায়, আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিকে কেন্দ্র করে ভর্তি কমিটির সভা আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ের শেষ পর্যায়ে আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সংস্কার বিষয়ক আলোচনা শুরু হয়। মিটিং চলাকালীন সময়েই প্রশাসন ভবনের নীচে উক্ত বিভাগের দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীরা বিভাগ সংস্কার নিয়ে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করছিলেন। উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে আল ফিকহ বিষয়ে আলোচনা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আচমকা দরজার সামনে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকে এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলামকে খুঁজতে থাকে। এসময় সভাকক্ষে উপস্থিত প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেও তীব্র ক্ষোভের মুখে ব্যর্থ হন৷
সভায় থাকা একাধিক শিক্ষক জানান, সভার কার্যক্রম প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু আল ফিকহ বিভাগ নিয়ে একটি জটিলতা চলছে তাই আলোচ্যসূচি অনুযায়ী আলোচনা শুরু হলে শিক্ষার্থীদের স্লোগান শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রশাসন ভবনের নীচেও দুই গ্রুপের স্লোগান চলছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সভা কন্টিনিউ করতে না পারায় ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও অন্যান্যরা নিজেদের মতো বেরিয়ে যান। সভা সেখানেই স্থগিত হয়ে যায়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ভর্তি কমিটির সভা চলাকালে আচমকা ঘটনাটি ঘটেছে। অফিসিয়াল চিঠিতে তো সব অনুষদের ডিন, সভাপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি তার নিরাপত্তা বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে আমাদের অবগত না করেই সভায় অংশ নিয়েছিলেন। হুট করে শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হয়ে স্লোগান শুরু করে। আওয়ামীপন্থী শিক্ষক বা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের কারোর ই আসার খবর আমরা জানতাম না।
উপাচার্যের ক্ষিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রক্টরিয়াল বডির সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। যেহেতু প্রশাসনিক সভায় এমনটা হয়েছে, ভিসি স্যার তার ক্ষোভের জায়গা থেকে হয়ত একটু রাগ করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি সবসময় আন্তরিকতার সাথে কাজ করে আসছে।
ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, প্রশাসন ভবনের ওই সময়ের ঘটনার ব্যাপারে আমি অবগত না। যে আবেগ নিয়ে শিক্ষার্থীরা জুলাই আন্দোলন করেছে তার স্ফুলিঙ্গ তো এখনো বিদ্যমান। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষোভের জায়গা থেকে এমনটা করতে পারে। আমরা বারংবার প্রশাসনকে বলেছি রুটিন ওয়ার্কের বাইরে যেন প্রশাসনিক কোন মিটিংয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের রাখা না হয়। প্রয়োজনে একটা তদন্ত কমিটি করে দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রশাসনে এখনো কেন সেরকম দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না সে ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে।
সভা পন্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা উপাচার্যের সাথে কথা বলতে বলেন। তবে জরুরি মিটিংয়ে থাকায় উপাচার্য ড. নকীব নসরুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বলেন, আল ফিকহ নিয়ে আলোচনা চলছিলো। একটা বিভাগের নাম পরিবর্তন, অন্তর্ভুক্ত অনুষদ পরিবর্তন বা এসব বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ এবারে যেহেতু হাতে একদম ই সময় নেই, হয়তোবা এই শিক্ষাবর্ষে পূর্ববর্তী ধারাতেই পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ ভর্তি কমিটির সভা প্রায় শেষের দিকেই চলে এসেছিল। এরমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা গিয়ে উপস্থিত হয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা সেখানেই শেষ করা হয়েছে। ভিসি স্যার চাইলে আরো সভা আহ্বান করতে পারেন।