ক্যালকুলাস’র ফল নিয়ে অসন্তোষ, যা বলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাই

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষের ক্যালকুলাস বিষয়ের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যালকুলাস বিষয়ের ক্রেডিট ২, অন্য বিষয়গুলোর মতো এই বিষয়েরও ক্রেডিট ৪ ধরে ফলাফল প্রস্তুত করেছে। এর ফলে যারা নিশ্চিত জিপিএ-৫ পাওয়ার কথা ছিলো তারা সি এবং ডি পেয়ে কোনোভাবে পাশ করেছেন। আর যারা শতভাগ পাশ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল তারা ফেল করেছেন। ফল নিয়ে অসন্তোষে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যালকুলাস গাণিতিক বিষয়। এইচএসসিতে শিক্ষার্থী যে ধরনের ক্যালকুলাস সমাধান করে থাকেন স্নাতকের ক্যালকুলাস তার চেয়ে অনেক কঠিন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। সেজন্য তারা পরীক্ষায় খারাপ করে থাকতে পারেন। কোনো শিক্ষার্থীকে ইচ্ছকৃতভাবে ফেল করানোর সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২ ক্রেডিটের কোর্সকে ৪ ক্রেডিট ধরার সুযোগ নেই। ফলাফল তৈরি হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এখানে ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এছাড়া পরীক্ষকদের যে খাতা দেওয়া হয় সেখানে রোল নাম্বার উল্লেখ থাকে না। কাজেই কোন কলেজের খাতা কোন শিক্ষক মূল্যায়ন করছেন তা জানার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, ক্যালকুলাস কঠিন সাবজেক্ট। গাণিতিক সমাধান করতে হয়। এখানে ছোট্ট ভুলেও নাম্বার কাটা যায়। কাজেই এ বিষয়ে ফল খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও অনেকেই ক্যালকুলাসে পাস করতে পারেন না। ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

এর আগে গত বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবারের পরীক্ষায় ৩১টি বিষয়ে ৮৮০টি কলেজের মোট ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮০ জন পরীক্ষার্থী ৩৩৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন। এ পরীক্ষায় ৮৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রকাশিত ফলাফলে ক্যালকুলাস বিষয়ের ফল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া কলেজের শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হলে সেটি মেনে নেওয়া যেত। তবে নামীদামী সব কলেজের চিত্র একই। যে সকল কলেজ র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দিকে রয়েছে সেই কলেজের শিক্ষার্থীরাও কেবল ক্যালকুলাস বিষয়ে ফেল করেছেন। অন্যান্য সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ফল ভালো হয়েছে।

নীলিমা ফেরদৌস নামে পাবনার এক শিক্ষার্থী বলেন, ফল প্রকাশের পর আমরা বিভিন্ন কলেজের ফল সংগ্রহ করেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দিকে থাকা ৩০টি কলেজের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ৩০টি কলেজে ক্যালকুলাস বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন ৬ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ৩৫২ জন। আর ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ১০২ জন। যা বাস্তব সম্মত নয়।

চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোথাও কোনো কিছুতে ভুল হয়েছে। আমার এমন কয়েকজন বন্ধু রয়েছে যাদের ক্যালকুলাস বিষয়ে ফেল করা প্রায় অসম্ভব। প্রকাশিত ফলে তারাও ফেল করেছে। আমরা এই ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ফল প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।

সার্বিক বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কলেজের শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেন। ফল প্রকাশের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফল প্রকাশে প্রোগ্রামিংয়ে খুব সামান্য ভুল হতে পারে। এমনটি হলে সংশোধন করা হবে। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন যথাযথ ফল পাননি, সেক্ষেত্রে পুনঃমূল্যায়নের আবেদনের সুযোগ রয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেউ ফেল করবে কেউ পাস করবে এটাই স্বাভাবিক।

 

সর্বশেষ সংবাদ