৪০ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রার নিয়োগের অভিযোগ ইসলামি আরবির ভিসির বিরুদ্ধে

মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ, তদন্তে ইউজিসি

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো   © টিডিসি ফটো

দেশের ইসলাম ধর্মভিত্তিক কয়েক হাজার শিক্ষালয়ের তদারক প্রতিষ্ঠান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইএইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে ইউজিসির নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে একাধিক নিয়োগ, নিয়োগে আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা লাভসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবিস্তারে জানানো হয়েছে ওই অভিযোগে। আর এসব অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে গত ২৬ নভেম্বর দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ইউজিসি সদস্য ড. হাসিনা খানের নেতৃত্বে সম্প্রতি গঠিত একটি কমিটি বিষয়টির তদন্তে নামছে। 

এর আগে কমিশনের পক্ষ থেকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ’র বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। এরপর প্রতিবেদনের সে আলোকে প্রতিষ্ঠানটির চার কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এপিএস ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-রেজিস্ট্রার আবু হানিফাও ছিলেন।

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের ইমরুল হাসানের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অভিযোগে জানানো হয়েছে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা আমলে না নিয়ে উপাচার্যের বাসার কাজের মেয়ে রোজিনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির দায়ে (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপ-রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলামকে রেজিস্ট্রার হিসেবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা এবং ইউজিসির চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ নীতিমালা পাশ কাটিয়ে পিআরএল ভোগরত কর্মকর্তাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখায় পরিচালক পদে নিয়োগ, আঞ্চলিক স্বেচ্ছাচারিতার অংশ হিসেবে ১৬তম গ্রেডের সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে সাকুল্য বেতনে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীকে ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান এবং প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি কারো কাছেই জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নন—এমন মন্তব্যের বিষয়েও জানানো হয়েছে ওই অভিযোগপত্রে।

এর বাইরে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করা অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিধান লঙ্ঘণ করে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে গাড়ি মেরামত, বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কোম্পানির নিকট থেকে ফার্নিচার ও মালামাল ক্রয় এবং এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণের মতো বিষয়গুলোও।

ব্যক্তিগত ঈর্ষার কারণে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরকে সকল কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারের আর্থিক অপচয়, ভাইস চ্যান্সেলর দপ্তরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বা অফিসসমূহে শুধু বরিশাল অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন এবং ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগও আনা হয়েছে অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে।

এর আগে বিগত ২০২২ সালের মার্চে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও চাকুরি স্থায়ীকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা ইউজিসিকে। কমিশনের তদন্তের পর উচ্চশিক্ষালয়টিতে চলমান এ নিষেধাজ্ঞা প্রায় দেড় বছর পর তোলা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এ সময়েও বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতি অব্যাহত ছিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে।

জানতে চাইলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই—উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও ইমরুল হাসান নামে অভিযোগকারী হিসেবে যে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে—এমন কোনো ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই বলেও জানান তিনি। 

আর সবগুলো অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, যে কেউ চাইলে অভিযোগ দিতে পারেন। কেউ যাতে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ না হয়, ব্যক্তিকে অসম্মান করতেই এসব অভিযোগ জানানো হয়েছে। আর আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। অভিযোগে যেসব বিষয়ে জানানো হয়েছে—তা ঘটার কোনো সুযোগ নেই এবং ঘটেওনি।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন সদস্যের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে ইউজিসি বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছে। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন পর্যায়ে রয়েছে, তদন্ত শেষ হলে আমরা প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।

উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়্যারমানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 


সর্বশেষ সংবাদ