রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের অনিয়মের প্রতিবাদে ট্রেজারারের পদত্যাগ!
- ইরফান এইচ সায়েম ও খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ AM , আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩১ AM
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি আচার্য বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমদ। যদিও অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ্ আজমের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া পদটি ছাড়তে চাইছেন ট্রেজারার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও রবি সূত্র জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারারের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িটি দীর্ঘদিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমদকে না দিয়ে উপাচার্যের স্ত্রী ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন ট্রেজারার ড. ফিরোজ আহমদ। এছাড়া ট্রেজারারকে এড়িয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। এমনকি শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া নিয়েও ট্রেজারারের ঘোর আপত্তির কথা শোনা যায়।
অভিযোগ উঠেছে, মূলত এমন প্রেক্ষাপটেই পদত্যাগ করেছেন ট্রেজারার। যদিও উত্থাপিত সব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ্ আজম।
সম্প্রতি দেশের নবীন এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমদ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে সেটি গ্রহণ না করে গত ১০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে বিষয়টির সমাধানের জন্য জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেটে আলোচিত হয়ে সিদ্ধান্ত আকারে যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
আরও পড়ুন: মাভাবিপ্রবি: শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্যের ‘স্বেচ্ছাচারিতায়’ বাদ পড়েছেন যোগ্যরা
এর আগে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট ৪ বছরের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিনের এই অধ্যাপককে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সে হিসেবে চলতি বছরের আগস্টে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে একটি বিশেষ এলাকাকে গুরুত্ব দেন। এছাড়াও আর্থিক বিভিন্ন বিষয়েও তিনি অনিয়ম করেছেন। পাশাপাশি তিনি সহকর্মীদের সাথে সহযোগিতার বিপরীতে চরম অসহযোগিতা করছেন। ফলে অনেকটা অভিমান জমিয়ে সময়সীমা শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ছেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমদ।
এ নিয়ে জানতে চাইলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমদ বলেন, এটা আসলে মিডিয়াতে আসা কোনো বিষয় নয়। বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। আমি মন্ত্রণালয়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। তবে মন্ত্রণালয় সেটি গ্রহণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হয়ে আসার জন্য বলেছে। তবে সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রসেসের কথাও বলা হয়নি। লিখিতও কোনো কিছু থাকবে বিষয়টি এমন নয়।
আরও পড়ুন: নিয়োগ প্রার্থী জোবেদাকে ডাকার ‘নকল কল লিস্ট’ সাজাল বেরোবি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শীর্ষ ব্যক্তির অসহযোগিত কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে এই সিদ্ধান্ত কিনা—এমন প্রশ্নে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমদ জানান, এরকম কিছু নয়। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে—দায়িত্বে থাকা উচিত নয়। সেজন্য আমি এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যেতে চেয়েছি। আমার এখানে ভালো লাগছে না।
জানতে চাইলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ্ আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ট্রেজারার সাহেব আমাকে জানিয়েছেন—তিনি আবারও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চান। সেজন্য তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এখন মন্ত্রণালয় যেহেতু সিন্ডিকেটে আলোচনার জন্য জানিয়েছে—আমরা তাই করবো।
এর মধ্যে তিনি (ট্রেজারার) যদি তার মতামত বদলান তাহলে তিনি থেকে যাবেন জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ট্রেজারার সাহেব তার গাড়িটি নিজেই ব্যবহার করছেন। এছাড়াও আমার ওয়াইফ সেখানে থাকেন না, তিনি ঢাকায় থাকেন। ফলে তিনি ট্রেজারার সাহেবের গাড়ি ব্যবহারের কোনো প্রশ্নই আসে না। ট্রেজারার মহোদয় বর্তমানে নিজের গাড়ি নিয়ে ঢাকায় রয়েছেন। যেসব অভিযোগ জানানো হয়েছে—তার কোনো সত্যতা নেই।
আরও পড়ুন: মেডিকেলের ফাঁস হওয়া প্রশ্নে দেশে দেড় হাজার ডাক্তার
বিষয়টি অবগত হওয়ার পর দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, যদি বিষয়টি সত্য হয়—তাহলে উপাচার্য অনৈতিক কাজ করেছেন। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। সরকার বাংলাদেশের কোনো উপাচার্যের স্ত্রীর জন্য গাড়ি বরাদ্দ করেনি।
এছাড়াও দেশের নবীন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এখনও সরকারের পক্ষ থেকে গাড়ি বরাদ্দ পাননি জানিয়ে সচিব জানান, এ রকম একটি পরিস্থিতিতে যদি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনের গাড়ি অন্যায়ভাবে আরেকজন ব্যবহার করেন, তাহলে সেটি মেনে নেওয়া যায় না।