দর্শনার্থী ও কোলাহলে জাবিতে কমছে অতিথি পাখির আগমন
- আমান উল্যাহ আলভী ও জোবায়ের আহমেদ
- প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৯ AM , আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫৪ AM
প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এর আবহটা একটু ব্যতিক্রম। সবুজ গাছপালা ও নয়নাভিরাম লেকসমৃদ্ধ ক্যাম্পাসে অন্যতম আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ অতিথি পাখি। প্রতিবারের মতো এবারো শীতের শুরুতেই জাবির লেকগুলোয় অতিথি পাখির দেখা মিলেছে। তবে সংখ্যায় তুলনামূলক কম। দর্শনার্থীর উৎপাত, লেকের পাশে খাবারের দোকান ও লেকে অতিরিক্ত কচুরিপানার কারণে তাদের স্বাভাবিক বিচরণ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়াজনিত কারণে প্রচণ্ড শীত আর খাদ্য সংকটের কবলে পড়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে অতিথি পাখি ছুটে আসে বাংলাদেশে। এছাড়া মঙ্গোলিয়া ও নেপালের হিমালয় অঞ্চলে শীত ও ভারি তুষারপাতে টিকতে না পেরে পরিযায়ী পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। শীতের রেশ কেটে গেলে বসন্তের সময়ে তারা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছিল। এছাড়া ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০২০ সালে। ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৭৮০, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৭৩১, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৯৭৫, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭০৯ এবং ২০২০ সালে আসে ৮ হাজার ১২০টি পাখি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বহিরাগতদের অবাধে বিচরণ, গাড়ির উচ্চ শব্দের সমস্যার ফলে লেকগুলোয় পরিযায়ী পাখি কম দেখা যায়। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অনেক জায়গায় গাছ কাটা পড়ছে। বিষয়টি পাখিদের বাসস্থান ও বংশবিস্তারের অন্তরায়।’
২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০২০ সালে। ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৭৮০, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৭৩১, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৯৭৫, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭০৯ এবং ২০২০ সালে আসে ৮ হাজার ১২০টি পাখি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬টি লেক রয়েছে। এসব লেকে যেসব অতিথি পাখি আসে, তাদের বেশিরভাগই হাঁস জাতীয়। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, কোম্বডাক, পাতারি হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও কাম পাখি অন্যতম। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা চিতা টুপি, লাল গুড়গুটি, বামুনিয়া হাঁস, নর্দার্নপিনটেল ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি পাখিও আসে এ ক্যাম্পাসে।
ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী জেবুন্নেসা হামিদ বলেন, ‘আমরা আগের তুলনায় পাখির পরিমাণ কম দেখতে পেয়েছি। মূলত নীরব এলাকা ও পরিবেশে তারা থাকতে ভালোবাসে। করোনাকাল যার বড় প্রমাণ। এছাড়া লেকগুলো পরিষ্কার না করায় খাবারের সংকট তীব্র হয়েছে। জঙ্গল কেটে ফেলায় বাসস্থান সংকট বেড়েছে। সংরক্ষণ উপযোগী বাকি জায়গাগুলো যদি রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় এবং বেশি গাছ লাগানো যায়, তাহলে সবুজের পরিমাণ বাড়বে। তখন ক্যাম্পাস পাখি থাকার উপযোগী হবে।’
সম্প্রতি জাবির অতিথি পাখি দেখতে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাখির কারণে পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়। তবে যারা ঘুরতে যান, তাদের উচিৎ পাখির সুরক্ষার কথা চিন্তা করা। কোলাহল কম করে যতটা সম্ভব সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে। তবে এ ক্যাম্পাসে সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। সুযোগ পেলে হয়তো জাবিতেই পড়তাম।
গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে প্রথম পাখি আসে। এবার গতবারের তুলনায় কম। এর মূল কারণ কারণ হচ্ছে কোলাহল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচুর লোকজন আসছে। গত শুক্র ও শনিবার এতো লোকজন এসেছে যে, কোলাহলের মধ্যে তারা বসবে না স্বাভাবিক -প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান
এবার শীতে পাখির আগমন কমেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে প্রথম পাখি আসে। এবার গতবারের তুলনায় কম। এর মূল কারণ কারণ হচ্ছে কোলাহল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচুর লোকজন আসছে। গত শুক্র ও শনিবার এতো লোকজন এসেছে যে, কোলাহলের মধ্যে তারা বসবে না স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এখানে এতো কোলাহল থাকায় তারা অন্যান্য এলাকায়, বিশেষ করে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেকে ভিড় করছে। কারণ তাদের ওইখানে কোলাহল কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন নির্মাণের ফলে পাখিদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ লেকের পরিবেশ ঠিক থাকলে পাখি বসবে। ক্যাম্পাসে গাড়ির সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। গাড়ির উচ্চ শব্দে তারা ভয় পায়।
আরো পড়ুন: চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১১৬
ছুটির দিনে বহিরাগতদের অনেকে পাখির দিকে ঢিল ছোঁড়ে জানিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, এখন পরিবহন চত্বরের পাশের লেকগুলোতে পাখি বসতে চায় না। লেকের আশেপাশের কোলাহল যদি কমানো যায়, তাহলে আশা করা যায়- ভালো পরিমাণ পাখি আসবে।