১৩৪ বছরে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বিএম কলেজ

সরকারি ব্রজমোহন বা বিএম কলেজ
সরকারি ব্রজমোহন বা বিএম কলেজ  © টিডিসি ফটো

দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড খ্যাত বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ। আজ ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ইতিহাস-ঐতিহ্যের ও গৌরবের পীঠস্থানটির। বাংলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠটি গড়ে ওঠে ১৮৮৯ সালের এই দিনে। ইংরেজ শাসনামলে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।

পরাধীন দেশে, বৈরি পরিবেশে স্কুল, কলেজ স্থাপন করা সহজ কাজ ছিল না। অশ্বিনী কুমার সে অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করেন নিজের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির জোরে। প্রকৃতির অপার দান সত্ত্বেও নদীবিধৌত বরিশাল ছিল অবহেলিত অঞ্চল। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এক পশ্চাৎপদ জনপদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী ১৮২৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজি স্কুল। ১৮৫৩ সালে সেটি বরিশাল জিলা স্কুলে রূপ নেয়। সেটি ছিল শাসকগোষ্ঠীর প্রয়োজনে। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ অশ্বিনীকুমারকে উদ্বেলিত করে ঘুমন্ত বরিশালকে জাগ্রত করতে শিক্ষার আলোকবর্তিকা রূপে আবির্ভূত হন তিনি। তৈরি করেন স্কুল, কলেজ। সত্য, প্রেম, পবিত্রতার আলোকে নিজ ছাত্রকে উদ্ভাসিত করেন।

প্রতিষ্ঠার শুরুতে কলেজটির কার্যক্রম চালু থাকে ব্রজমোহন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। পরে অশ্বিনীকুমার জীবিত থাকতেই ১৯১৭ সালে কলেজটি বর্তমান পুরোনো ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। 

ফলে শুরুতেই অনেক প্রতিভাবান উচ্চ শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামীর সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করে দেশসেবা ও মানুষ গড়ার সু-মহান ব্রত নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। অশ্বিনীকুমার তৎকালীন এ ধরনের অনেক শিক্ষকের সমাবেশ ঘটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

এ সময় সহকর্মী হিসেবে সাথে পান শ্রীযুক্ত অক্ষয় কুমার, কালীশচন্দ্র, জগদীশ, ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, সতীশচন্দ্র চ্যাটার্জী প্রমুখ বাংলার বরেণ্য ব্যক্তিবর্গকে। তাঁর আদর্শিক ভাবধারা, দক্ষ পরিচালনা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার কারনে কলেজের শিক্ষার মান এ পর্যায় এতটাই উন্নত ছিল যে, ইংরেজ রাজপুরুষরা একে বাংলার অক্সফোর্ড বলে অভিহিত করেন। শিক্ষকদের অসাধারণ পান্ডিত্য, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, নৈতিক মূূল্যবোধের প্রখরতার কারনে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীরা ঈর্ষনীয় ফলাফল করতে থাকে। কলেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে বাংলা ছাড়িয়ে উপমহাদেশব্যাপী।

১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল ছিল কলেজের স্বর্ণযুগ। এ পর্বে (১৯৩৫-১৯৪৬) কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন নির্সগের কবি, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৯২৮ সালে ব্রজমোহন কলেজের কৃতি শিক্ষার্থী শ্রীমতী শান্তি সুধা ঘোষ গণিতে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে ঈশান বৃত্তি লাভ করেন। এ ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও অব্যাহত থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৫ সালে অনার্স পরীক্ষায় কলেজের রসায়ন বিষয়ের ছাত্র দিলীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। অর্জন করেন দুর্লভ কালীনারায়ন বৃত্তি। এছাড়া বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলেজের মেধাগত অবস্থান থাকতো নিয়মিত। সময়ের হাত ধরে সে নাম-যশ-খ্যাতি আজও দীপ্যমান।

আরো পড়ুন: মেডিকেলে চান্স না পাওয়া ইমরান ববিতে অনুষদ সেরা

২০১৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো অধীনস্থ কলেজ গুলোর ভেতরে র‌্যাঙ্কিং করে। তাতে ইতিহাসের সাক্ষী এ বিদ্যাপীঠ দেশসেরা পাঁচটি কলেজের একটি বলে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালেও তারই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। এ গৌরব বরিশালবাসীর। এ কৃতিত্ব কলেজের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক সবার। 

সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র তানজিল ইসলাম শুভ বলেন, বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেক সমস্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হলগুলোর বেহাল অবস্থা, শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে থাকতে পারছেন না। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায় থাকা। বড় ভাইদের কারণে অনেক শিক্ষার্থী হলে সিট পাচ্ছে না। কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। ক্যান্টিন নিয়মিত খোলা হয় না। ময়লা আবর্জনা ও অপরিষ্কার থাকে।

ব্রজমোহন কলেজ সরকারিকরণ হয় ১৯৬৫ সালে। সংশ্লিষ্ঠদের মতে, এখান থেকেই বর্তমান সময়কে কলেজের সমৃদ্ধির পর্ব বলা যেতে পারে। এক সময় যে কলেজে কেবল উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কোর্স চালু ছিল, আজ সে কলেজে ২৩ বিষয়ে পাঠদান করা হয়। এরমধ্যে ২২ বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু আছে।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সমান্তরালে দীর্ঘ দু'দশক পর কলেজের পূর্ব সুনাম ফিরিয়ে আনতে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের মানসন্মত কলেজে পড়ার সুবিধার্থে ও বিজ্ঞানমনস্ক ছাত্র গড়ে তুলতে বন্ধ হয়ে যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শ্রেণিতে পাঠদান পুনরায় শুরু হয়।

কলেজ ক্যাম্পাস দৃষ্টিনন্দন করতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষার্থীদের মননে সঞ্চারিত করতে নির্মাণ করা হয়েছে বিজয় প্রাঙ্গণ ও স্বাধীনতা চত্বর। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর স্হাপন করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে কলেজের শহীদ শিক্ষক-ছাত্রদের স্মরণে কালজয়ী নিদর্শন- গৌরবের অমর গাঁথা শহীদ স্মৃতি ফলক। ইতিমধ্যে এর স্হাপত্য নিদর্শন অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের হাত ধরে দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বিএম কলেজের যাত্রা শুরু হয়। আজ ১৩৪ বছরে পদার্পণ করলো। এ যাত্রায় আমরা পেয়েছি কবি জীবনানন্দ দাশসহ বেশ কিছু মহান ব্যক্তির দেখা। কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা শ্রদ্ধা জানাই সেই মহান ব্যক্তিবর্গের। কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্র-শিক্ষক সবার জন্য শুভকামনা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence