হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা চাকরি পাচ্ছে কুবিতে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আরেক আসামিকে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রায় তিন বছর বোর্ড (আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়ার আয়োজন) গঠন করা না হলেও ওই অভিযুক্তকে নিয়োগ দিতে প্রশাসন উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বোর্ড আয়োজন হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগেও একই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত একাধিক আসামিকে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যাল প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড এমরান কবির চৌধুরীর প্রশাসন। করোনার কারণে বোর্ড পিছিয়ে গেলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি এসে পুনরায় একই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর এক বছরেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেছে, তবে বোর্ড আয়োজন করেনি কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় শূন্য পদের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও এ ব্যাপারে নীরব ছিল তারা। এমনকি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম. আবদুল মঈনের যোগদানের পরে তাকেও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল। আবদুল মঈন যোগদানের পর এ ব্যাপারে আট মাস নীরব থাকলেও নির্দিষ্ট প্রার্থী ও হত্যা মামলার আসামি রেজাউল ইসলাম মাজেদকে নিয়োগ দিতে চলতি মাসে বোর্ড গঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেজাউল ইসলাম মাজেদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নিজেদের মদদপুষ্ট লোকেদেরকে নতুন কমিটিতে আনতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সাধারণ সম্পাদককে চাকরি দিতেও মরিয়া হয়ে পড়েছেন তাঁরা। প্রশাসন ছাত্রলীগে হস্তক্ষেপ করে এ পদ শূন্য করে কমিটি বিলুপ্ত করতেই তড়িঘড়ি তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বোর্ড আয়োজন করেছে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রেজাউল ইসলাম মাজেদ আরও কয়েকজন নেতাকর্মীসহ নিজেদের নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডারের দাবিতে উপাচার্যের গাড়ি অবরোধ করে রাখেন। তখন গাড়ির সামনে চাকরির দাবিতে তিনি সহ কয়েকজন বসে পড়েন। একই ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, চাকরি পাওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে মাজেদ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশাসনের পক্ষ নিয়েছেন। প্রশাসনের এক কর্তা তাকে সরাসরি চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা চাচ্ছেন ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে নিজেদের মদদপুষ্ট লোক আসুক। সাধারণ সম্পাদকের চাকরি হয়ে গেলে কেন্দ্রের কাছে কমিটির মূল্য থাকবে না। তখন কেন্দ্র স্বপ্রণোদিত হয়ে কমিটি ভেঙ্গে দেবে।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘‘এটা (সাধারণ সম্পাদকের চাকরি) মূলত কমিটির ওয়েট নষ্ট করার জন্য। শাখা ছাত্রলীগের কাউকে চাকরি দেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনকে বলিনি। তবে প্রশাসনের ব্যক্তিগত পছন্দ থাকতে পারে।’’

ইলিয়াস আরও বলেন, ‘‘খালেদ সাইফুল্লাহ আমার কর্মী ছিল। তার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের জন্য আমি সব্বোর্চ চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু অপরাধীরা অনেক ক্ষমতাশালী। এটার সাথে জড়িত কেউ অনৈতিক সুবিধা পাবে তা আমি চাই না।’’

২০১৬ সালের ১ আগস্ট ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ। ওই হত্যা মামলার চার্জশিটে ৩ নং আসামি হিসেবে তালিকায় নাম উল্লেখ রয়েছে রেজাউল ইসলাম মাজেদের। এ মামলায় ৫৫ দিন জেলও খেটেছেন তিনি। আদালতে বিচারাধীন ওই মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

এ বিষয়ে আসামি রেজাউল ইসলাম মাজেদের ভাষ্য, তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। তিনি এ ঘটনায় নিরঅপরাধ। তবে পুলিশের চার্জশীটে তার নাম থাকার কথা বলা হলে তিনি বলেন, তুমি কি আমাকে হত্যা মামলার আসাসি মনে করতেছো। ওই ঘটনার তো এখনও চার্জশিট (চূড়ান্ত) গঠন করা হয় নাই।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে মামলাটি তদন্ত করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তবে বাদির নারাজি আবেদনের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। আরেকবার নারাজির পর মামলাটি তদন্ত ভার যায় সিআইডির হাতে। সংস্থাটির চার্জশিটেও নারাজি দেওয়ার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। তাদের চূড়ান্ত চার্জশিট এখনও আদালতে জমা দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, আমি যতদূর জানি এই সার্কুলারটা অনেক দিন আগের। তবে নির্দিষ্ট কাউকে টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার জন্য (বোর্ড) হলে বিষয়টা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তো কাউকে আইনের ভাষায় দোষী বলা না গেলেও এ ধরনের অভিযুক্ত কাউকে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মামলার বিষয় বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে। প্রশাসন যতি হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিকে চাকরির দেওয়ার জন্য যদি তোড়জোড় করে থাকে, তাহলে এটা দুঃখজনক। প্রশাসনের উচিৎ এসব বিষয়গুলোতে আরও দায়িত্বশীল হওয়া।

নিহত খালিদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি জীবিত ছেলে দিছি, তারা আমাকে মরা লাশ উপহার দিয়েছে। প্রশাসন আমার ছেলের হত্যাকান্ডের বিচার না করে একেরপর এক চাকরি দিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলের কবর ছুঁয়ে ইলিয়াসও প্রতিজ্ঞা করেছিল বিচার করবে। কিন্তু সে তাদের চাকরি দিয়ে সহযোগিতা করেছে। ইচ্ছে করি তাদেরকে বলি আমাকেও রক্তে ভাসিয়ে দাও আমার ছেলের মতো করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যের যেন মাজেদকে এখন চাকরি না দেয়, সেই আশা করব।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমাযুন কবির বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো বক্তব্য নেই। কারণ এই সম্পর্কে আমি জানি না। কালকে শুধু রিটেন হবে, ভাইবা কবে হবে সেটাও জানি না। তবে বিশেষ কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটার বিষয়ে তো আমি জানতে পারব না। এইরকম কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকলে তোমরা বলতে পার। কে অপরাধী সে তথ্যও আমার কাছে জানা নেই।

তবে সোর্সের (সংবাদের) নাম না বলায় এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। তিনি বলেন, আমিতো এ বিষয় দেখবো পরে। তোমাকে এই তথ্য কে দিয়েছে, সেটা বল।

প্রতিবেদক সোর্সের বিষয়ে জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করায় উপাচার্য কোনো উত্তর দিতে পারবেন না বলে কল কেটে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence