‘এখনো পরীক্ষা বাতিলের সুযোগ আছে, দিতে হবে প্রশ্নফাঁসের অকাট্য প্রমাণ’

সরকারি কর্ম কমিশন
সরকারি কর্ম কমিশন  © ফাইল ছবি

বিসিএসসহ ৩০ গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলেও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) গঠিত তদন্ত কমিটি এর কোনো প্রমাণ পায়নি। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়নি বলে জানিয়েছে পিএসসি। তবে এখনো যদি প্রশ্নফাঁসের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পিএসসি’র নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তবে অকাট্য প্রমাণ না পেলে জোর করে পরীক্ষা বাতিল করা যাবে না।’

আরও পড়ুন: পদত্যাগে প্রস্তুত পিএসসি চেয়ারম্যান-সদস্যরা, অপেক্ষা সবুজ সংকেতের

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ‘তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি নিয়ে কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করলে, তার কাছে আমাদের আহবান থাকবে; অকাট্য তথ্য-প্রমাণ নিয়ে পিএসসিতে জমা দিন। যে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ পেলে সেটি বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো আপোষ করবে না পিএসসি।’

তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পরও কীভাবে পরীক্ষা বাতিল হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের কমিশন রয়েছে। কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তবে অবশ্যই অকাট্য প্রমাণ দিতে হবে।’

তদন্ত প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবে চলতি সপ্তাহে
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে সেটি চলতি সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পিএসসি।

আরও পড়ুন: আরও দুই পরীক্ষা স্থগিত করলো পিএসসি

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসির এক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য পিএসসি সচিবকে বলা হয়েছে। তিনি স্বাক্ষর করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবার প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে বলেও জানান তিনি।

সিআইডির বক্তব্য প্রত্যাখান পিএসসি’র
বিসিএসসহ ৩০ গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেলেও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তদন্তে তা প্রমাণিত হয়নি। পিএসসির এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ‍তুলেছে সরকারি গোয়েন্দ সংস্থা সিআইডি। তবে সিআইডির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পিএসসি জানিয়েছে, সিআইডি এবং চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরকে তিনবার চিঠি দেওয়া হলেও তারা চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পিএসসির তদন্ত কমিটি তাদের কোনো বক্তব্য নেয়নি। কোনো বিষয়ে তথ্যও চায়নি। সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি আমরা পাই, ওই দিনই আমাদের বক্তব্যের জন্য যেতে বলে। তবে সেদিন আদালতে আমাদের মামলার তারিখ থাকায় যেতে পারিনি। এ বিষয়ে পিএসসিকে জানানো হয়েছে। পরে পিএসসি আর আমাদের বক্তব্য নেয়নি।’

সিআইডির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সিআইডিকে তিন দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানোর ১৫ দিন পর সভা ডাকা হয়েছে। তবে কোনো সভাতেই তাদের লোকজন উপস্থিত হননি। এমনকি সবশেষ যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সেই চিঠিতে দিনের যে কোনো সময় তাদের আসার আহবান জানানো হলেও তারা আসেননি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটিতে ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে কেবলমাত্র তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য। তবে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর কিংবা সিআইডি কেউই আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি। যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৭ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বিসিএসসহ ৩০ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর। প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে পিএসসি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

কমিটির কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সরকারি কর্ম কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল আলীম খানকে। কমিটির সদস্য পিএসসির পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা। তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব করা হয় পিএসসির পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হককে।

এই কমিটি দীর্ঘদিন প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তদন্ত করে। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কোথাও কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি বলে প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ