ফাঁস হয়েছিল ৪৬তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন, আশ্বাস ছিল লিখিতের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৯:০১ PM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৫ PM
৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এ পরীক্ষায় প্রার্থীদের আগের রাতে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এরপর সকালে যে যার কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। উত্তীর্ণও হয়েছেন প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেওয়া এসব প্রার্থীরা। প্রিলি পাস করার পর এসব প্রার্থীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন পাইয়ে দেয়ারও। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 24 এর অনুসন্ধানে। শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত ৯টায় টেলিভিশনটির প্রচারিত এক তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে প্রশ্নফাঁসের আদ্যোপান্ত।
গত ২৬ এপ্রিল ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন কেন্দ্রে ২০০ নম্বরের এ পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীরা অংশ নেন। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা দেননি ৮৩ হাজার ৪২৫ জন। উপস্থিতির হার ৭৫। এরপর গত ৯ মে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থী।
সরকারি কর্ম কমিশনেরর কর্মচারি সাজেদুল ইসলাম সাজু ছিলেন প্রশ্নফাঁস কাণ্ডের মূলহোত। তার কাছে থেকে ৪৬তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে। সম্প্রতি মাহমুদুল বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
৪৬তম বিসিএসের প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা অকপটে স্বীকার করে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘‘পিএসসির কর্মচারি সাজেদুল ইসলাম সাজু আমাকে মোহাম্মদপুর থেকে একটি বাসায় নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে আমাকে সকালের দিকে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন দিয়েছেন। ওইটা আমি পড়লাম। পড়ার পর হলে গিয়ে দেখি কমন পড়ছে। ১ লাখ টাকার বিনিময়ে এ চুক্তি হয়েছে।
এ বিসিএসে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন রুবেল নামে আরও এক প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘ পরীক্ষার আগের রাতে মাহমুদুল ভাই আমাকে আইডিবির সামনে আসতে বলেন। সেখান থেকে তারা আমাকে গাড়িতে করে মোহাম্মদপুর নিয়ে যান। মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় আমাদের রাত ৯-১০টার দিকে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেয়। ওই বাসায় আরও লোকজন ছিলেন। তারা আমাদের সারারাত ওই প্রশ্নগুলো সমাধান করিয়েছেন। তারপর আমাদের সকালে ছেড়ে দিয়েছেন। পরে আমরা সবাই যে যার কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।
রুবেল বলেন, প্রিলির জন্য ওই রাতে ১ হাজার থেকে ১২০০ প্রশ্ন পড়ানো হয়েছে। প্রিন্ট করা কাগজে তাদেরকে ওই প্রশ্নগুলো সরবরাহ করা হয়। মোহাম্মদপুরের যে বাসায় আমি প্রস্তুতি নিয়েছি, সেখানে ৮-৯ জন ছিলেন। ওই বাসায় আমাদের মতো আরও ১০০ জনের মতো প্রশ্ন পেয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমার সঙ্গে ২ লাখ টাকায় প্রশ্ন পাওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।
মাহমুদুল ও রুবেল ছাড়াও আরও ছয় শিক্ষার্থীর তথ্য উঠেছে চ্যানেল 24 এর অনুসন্ধানে, যারা প্রশ্ন পেয়েছিলেন। শুধু প্রিলিমিনারিই নয়, ফাঁস হয়েছে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নও। নাম-পরিচয় গোপন রেখে এক ব্যক্তি টেলিভিশনটির কাছে দাবি করেছেন, প্রিলির চার সেট ও লিখিতের চার সেট প্রশ্ন প্রার্থীরা পেতেন। প্রশ্ন পেয়ে প্রার্থীরা সারারাত পড়াশোনা করে সকালে পরীক্ষা দিতেন।
তিনি বলেন, ৩৩তম ও ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার আগে নোমান সিদ্দিকী প্রার্থী জোগাড় করতেন। তারপর ওই প্রার্থীদের মিরপুর ১০ নম্বরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতেন। সেটাকে বলা হতো বুথ। সেখানে সব প্রার্থীকে জড়ো করে রাখা হতো। তারপর রাত ২-৩টার দিকে পিএসসির বহিষ্কৃত কর্মচারি খলিল এসে হাতে লেখা কাগজে প্রশ্ন দিয়ে যেতেন। তারপর প্রার্থীরা সারারাত প্রস্তুতি নিতেন।
আগামী ২৮ আগস্ট ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ পরীক্ষা চলবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মাহমুদুল ও রুবেলকে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত এ চক্রটি ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছিল।
বিসিএস ছাড়াও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, অডিটর, সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স, পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাইফার কর্মকর্তা, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ মিলেছে। জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে পরীক্ষা চলাকালীন এমন অভিযোগ আসলে তখন সে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করার সুযোগ আমাদের ছিল।