পিএসসির ডেসপ্যাচ রাইডার কর্মচারীর বাসা দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়

এই বিল্ডিংয়ের সপ্তম তলায় ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে থাকেন অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান
এই বিল্ডিংয়ের সপ্তম তলায় ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে থাকেন অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর মিরপুরে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বিসিএসের প্রশ্নফাঁসে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে থাকা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ডেসপ্যাচ রাইডার (কর্মচারী) খলিলুর রহমান। ফ্ল্যাটের ভেতরের অবস্থা দেখে যে কারো চোখ কপালে উঠবে।

আজ বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে মিরপুর ৬০ ফিট রোডের পাকা মসজিদ সংলগ্ন পরমাগলিতে গিয়ে দেখা যায়, ৮ তলা ভবনের ৭তম তলায় খলিলের ফ্ল্যাট। সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর ওই বাসায় খলিলের বড় ভাই হাবিবুর রহমান ও বোন থাকছেন। 

ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা হয় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। এসময় তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘খলিলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সে যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত।’

খলিলের ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, অত্যন্ত গোছালো ও পরিপাটি ফ্ল্যাট। ভেতরে দামি আসবাবপত্রে পরিপূর্ণ। পুরো ফ্ল্যাটটিই কার্পেট বিছানো। ফ্ল্যাটের দেয়াল ও সিলিংয়েও সোনালি রঙের কার্পেট লাগানো। এগুলো করতেও খরচ হয়েছে কাড়ি কাড়ি অর্থ।

অফিস সহায়কের চাকরি করে কীভাবে এত দামি ফ্ল্যাট কিনলেন খলিল? জানতে চাইলে খলিয়ের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, খলিলের আয়ের উৎস সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। সে কীভাবে এত টাকার মালিক হলো সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

পরমাগলিতে বসবাসরত দোকানি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খলিলুর রহমান সম্প্রতি এই ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। ফ্ল্যাটটির আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা। মোটরসাইকেল যোগে পিএসসিতে যাতায়াত করতেন তিনি। গত সোমবার রাতে সিআইডির একটি দল খলিলকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটারসাইকেলটিও নিয়ে যায় সিআইডি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বাড়িটির একজন ফ্ল্যাট মালিক জানান, ‘খলিল ধরা পড়ার আগেই পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তিনি খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। তাকে দেখে কখনো মনে হয়নি, তিনি বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।’

এদিকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তার মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ১১ জন দেননি। ফলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের বাইরে আরও ১৪ জন হলেন পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বনিক, মো. খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এ টি এম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ। তারা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাবেক পিএসসি’র গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ সাতজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতারদের থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এ চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছেন প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ