স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ইউজিসির নির্দেশনায় যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় লগো
ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় লগো   © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার শর্ত রয়েছে। তবে এই ব্যাপারে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনীহা রয়েছে। দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপও নিচ্ছে না ইউজিসি।

সম্প্রতি ভর্তি বন্ধসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করার নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। যদিও প্রায় এক যুগ ধরেই এই নির্দেশনা দিচ্ছে ইউজিসি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে ভিন্ন কথা। সোমবার (১৮ এপ্রিল) ‘স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ইউজিসির নির্দেশনায় যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো’ প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উপাচার্য জানিয়েছিলেন, তাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এই ব্যাপারে তারা ইউজিসিকে জানিয়েছেন।

এদিকে ‘করোনায় ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়নি। রাস্তা চওড়া হচ্ছে। সড়ক বিভাগ নোটিশে জানিয়েছে, ভবনের একটি অংশ ভেঙ্গে ফেলতে হবে।’ বলে জানান দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিক।

অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার উপাচার্যের অধ্যাপক এমএ ওয়াদুদ মণ্ডল জানান, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়ছে? দেশের শিক্ষার্থীরাই তো পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে ছেড়ে দিলে হবে না, প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে হবে।

‘স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ইউজিসির নির্দেশনায় যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো’ প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে প্রতিবেদকের সঙ্গে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে।

২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ইউনিভার্সিটি করোনাকালীন সময়ের শুরু থেকে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ পাঠদান ও অন্যান্য সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসের মূল একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান বললেও তুরাগে প্রায় দেড় একর জমিতে ২ তলাবিশিষ্ট ১টি ভবনসহ একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. এম. আজিজুর রহমান জানান, ইউজিসির প্রতিনিধি দেখেছে আমাদের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। স্থানীয় ক্যাম্পাসে না যাওয়ার পিছনে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একেক কারণ রয়েছে। আমাদের স্থানীয় ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে। নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সরকারি সহায়তা আসে না উল্লেখ্য করে তিনি জানান, করোনার একটি ধাক্কা গিয়েছে। এ কারণে করোনার ধাক্কা সামলে কিভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়, পরিকল্পনা চলছে। আমাদের প্রত্যাশা আগামী এক বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।

তিনি দাবি করেন, আমাদের ব্যাপারে অন্য কোন অভিযোগ নেই। আমরা শিক্ষকদের সময় মতো বেতন-বোনাস দিচ্ছি, চাকরীচ্যুত করা হয় না।

অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি’র সঙ্গে তুলনা করে তিনি জানান, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের বেশি টিউশন ফি নিচ্ছে, আমরা তা নিচ্ছি না। আমাদের নামে মাত্র টিউশন ফি রয়েছে। আবার জিপিএ’র ওপরে ওয়েভার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিবন্ধীদের ১০০ ভাগ ওয়েভার দেওয়া হচ্ছে। করোনায় অনেক শিক্ষার্থীও ঝরে পরেছে। আমাদের সবকিছু মিলিয়েই দেখতে হয় ব্যাপারগুলো। চেষ্টা করছি যতদ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া যায়।

এদিকে, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ শুরুতে ঢাকার ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করতো। তবে শুরুতে ইউজিসি থেকে নবাবগঞ্জের সোনাবাজুতে অনুমোদন নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমান রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে ইউজিসি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি ক্যাম্পাস নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছে।

অনুমোদনের স্থানে না গিয়ে কেন সিদ্ধেশ্বরী প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইউসুফ মিয়া জানান, আগে ধানমন্ডিতে ও সিদ্ধেশ্বরীতে দুটো ক্যাম্পাস ছিল। পরে ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধেশ্বরীতে নিয়ে এসেছি।

তিনি অভিযোগ করেন, ইউজিসির দেওয়া আগের বিজ্ঞপ্তিতে আমাদের নাম ছিল না। এখন আবারও ইউজিসি আমাদের নাম দিয়েছে। এতে ধানমন্ডি ক্যাম্পাসের কথা বলা হচ্ছে, ধানমন্ডিতে এখন আমাদের কোন ক্যাম্পাস নেই। ইউজিসির ওয়েবসাইটে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা রয়েছে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নামের পাশে তা নেই।

তবে ‘স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাস-এ’ প্রশ্নে তিনি জানান, না সেটা বললে একটু ভুল হবে। সিদ্ধেশ্বরীতে ১০ বিঘা জমির ওপর সমস্ত কার্যক্রম নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা জানতে চেয়েছি, এখন কি করা যায়। আশা করছি এটাই স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে। ইউজিসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ঢাকার বনানীতে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরুতে রাজধানীর বাড্ডায় সাঁতারকুলে অনুমোদন নিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না, মিটিংয়ে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন, এ ব্যাপারে এখন কথা বলতে পারবেন না।


সর্বশেষ সংবাদ