এবার নর্থ সাউথের ট্রাস্টি চেয়ারম্যানসহ ৪ সদস্যকে দুদকে তলব

নর্থ সাউথ ও দুদক
নর্থ সাউথ ও দুদক  © লোগো

এবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন আহমেদসহ চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রবিবার (২ জানুয়ারি) দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাদেরকে আগামী ৪ ও ৬ জানুয়ারি উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির তলব করা সদস্যদের মধ্যে বেনজির আহমেদ ও রেহানা রহমানকে আগামী ৪ জানুয়ারি এবং বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন আহমেদ ও সদস্য আজিজ আল কায়সার টিটুকে আগামী ৬ জানুয়ারি হাজির হতে বলা হয়েছে।

এদিকে বোর্ড অব ট্রাস্টির দুই সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান ও এম এ কাশেমকে আজ জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা থাকলেও তারা কেউই হাজির হননি। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন তারা।

আরও পড়ুন: নর্থ সাউথের দুই ট্রাস্টিকে দুদকের তলব

যদিও এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তলব করার পর কেউ হাজির না হলে সাধারণত দ্বিতীয় দফায় সময় দেওয়ার বিধান নেই। তবে বড় কোনো কারণ বা মানবিক বিষয় হলে অনেককে পরে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই তাদেরকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথিপত্র তলব করে দুদক। যার বেশকিছু নথিপত্র দুদকে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছে- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ২০১০ থেকে আজ পর্যন্ত জমি ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত গাড়ি বা মোটরযান ক্রয় সংক্রান্ত নথিপত্র, ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা এবং ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং বিভিন্ন কমিটির সিটিং অ্যালাউন্স বরাদ্দ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।

গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং এম এ কাশেম সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।

কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তদারকিতে কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়সালকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়। টিমে ফয়সাল ছাড়াও অন্য সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। 

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জানিয়েছিল আইন ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিম উদ্দিন ও এম এ কাশেম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছেন। মূলত এ সিন্ডিকেটের কারণে নর্থ সাউথে অনিয়ম পরিণত হয়েছে নিয়মে। কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন নেওয়া, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, লাখ টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি ইত্যাদি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ারও সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জমা পড়েছে।

এসব অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনও হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের কবল থেকে রক্ষার দাবি জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। এত বেশি অনিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানও ক্রমেই নিম্নমুখী।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং এম এ কাশেম সিন্ডিকেটের হাতে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই জিম্মি হয়ে আছে।

এ দুজন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বেনজির আহমেদ, রেহেনা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আজিজ আল কায়সার টিটো এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন সুফী সাগর সামস।

তার দাবি, আজিম-কাশেম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অমান্য করে আটটি কমিটির বিপরীতে ২৫টি কমিটি গঠন করে অতিরিক্ত সিটিং অ্যালাউন্স আদায় করেন। এসব কমিটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে রেখেছেন তারা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ-অবৈধ সব কমিটিতেই আজিম বা কাশেম নিয়ম বহির্ভূতভাবে সদস্য হন।

এরপর ২৬ অক্টোবরও মানববন্ধন করা হয়। সেখানেও আজিম উদ্দিন ও এম এ কাশেম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence