অনিয়মের বৃত্তেই ঘুরছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মান নিয়ে প্রশ্ন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৪ AM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ১১:২৭ AM
২৭ বছর ধরে সমস্যার বৃত্তেই ঘুরছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়ছে না মোটেও। উচ্চশিক্ষার দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে।
এছাড়াও শিক্ষা পরিষদ, সিন্ডিকেট, পরিচালনা পর্ষদ ও অর্থ কমিটির সভা না করা, উপাচার্যসহ শীর্ষ তিন পদে নিয়োগে অনাগ্রহ, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে গড়িমসির মতো সমস্যা তো আছেই। পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগেও আছে ঢিলেমি।
বর্তমানে দেশে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গত মাসে প্রকাশ করা হলেও ইউজিসি প্রতিবেদনটি করেছে ২০১৮ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। তখন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ১০৩টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী তিন লাখ ৬১ হাজার ৭৯২ জন। এর মধ্যে ছাত্রী এক লাখ ১৪ হাজার ৬১৫ জন। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বড়জোর ১৫টি ভালোভাবে চলছে বা চলার চেষ্টা করছে।
ইউজিসি জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অনেকাংশই লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ জন্য এ বিষয়গুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনার সুপারিশ করেছে ইউজিসি। গত ২৯ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে জমা দিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, বার্ষিক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের দেওয়া তথ্যের ওপর। সেখানেই এত অনিয়ম-অব্যবস্থার চিত্র রয়েছে। প্রকৃত অবস্থা আরও খারাপ।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর নিয়ম মেনে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেয় না। অবশ্য গবেষণায় আগ্রহ কিছু বেড়েছে। ২০১৮ সালে ৭৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কমবেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এই খাতে মোট ব্যয় ছিল ৯০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে শিক্ষা পরিষদের সভাই (একাডেমিক কাউন্সিল) করেনি। অথচ ভর্তিসহ শিক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষা পরিষদের সভা লাগে। ওই বছর সিন্ডিকেটের সভা না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০টি। এ ছাড়া ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ কমিটির সভা হয়নি।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যাগুলো সমাধানে ইউজিসিকে পক্ষপাতহীন, প্রভাবমুক্ত এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে তৎপর হতে হবে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। কারণ, ইউজিসির সুপারিশ বা পদক্ষেপগুলো কার্যকর করবে মন্ত্রণালয় ও সরকার।’
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান অবস্থাকে একেবারে অসন্তোষ বলব না, পুরোপুরি সন্তুষ্টও বলব না। সমস্যাগুলো সমাধান করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’
এ ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন শিক্ষা পরিষদ, সিন্ডিকেটসহ এ ধরনের কমিটিগুলোর সভা নিয়মিত হওয়া উচিত। উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ যে প্রক্রিয়ায় হয়, সেখানে সময় লাগে। কিন্তু ইউজিসি সে বিষয়গুলো না বলে কেবল না থাকার তথ্যটি তুলে ধরে। বাস্তবতা হলো, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব পদ খালি থাকে।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ১৬ হাজার ৭৪ জন। আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামে খণ্ডকালীন শিক্ষক পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবেন না। বর্তমানে যত পূর্ণকালীন শিক্ষক আছেন, এর প্রায় ৩৭ শতাংশ খণ্ডকালীন।
ইউজিসির মতে, পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন শিক্ষকের এই অনুপাত সন্তোষজনক নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:২২। কিন্তু ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুপাত ১:৩০ বা তার বেশি। ইউজিসি বলছে, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৮৫।
২০১০ সালে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পর অন্তত ছয়বার সময় দেওয়া হলেও সাত বছরের বেশি বয়সী মাত্র ২১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে। বাকিরা জানিয়েছে, কেউ ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে, কেউবা জায়গা কিনেছে। অথচ আইনানুযায়ী সাত বছরের বেশি বয়সী মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অন্তত ৫৪।