এনএসইউতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাংবাদিকতা বিষয়ক শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫২ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৬ AM
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মিডিয়া, কমিউনিকেশন ও জার্নালিজম (এমসিজে) প্রোগ্রামের উদ্যোগে, ইউনেস্কো ও ডিজিটাল রাইটস নেপাল-এর সহযোগিতায়, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাংবাদিকতা: মিডিয়া শিক্ষার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা” শীর্ষক একটি হাইব্রিড সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সেমিনারটি কাঠমান্ডু বিশ্ববিদ্যালয় (নেপাল) ও গুরু গোবিন্দ সিং ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্ববিদ্যালয় (ভারত) এর অংশীদারিত্বে এবং এনএসইউ সিন্ডিকেট হল-এ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সেমিনারে দক্ষিণ এশিয়ার সাংবাদিকতা শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান প্রভাব, পাঠ্যক্রমে বিদ্যমান ঘাটতি, সংবাদ কক্ষের পরিবর্তন ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রথম আলো-এর অনলাইন বিভাগের প্রধান শওকত হোসেন মাসুম মূল বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল যান্ত্রিক কাজের জন্য এআই ব্যবহার করি—যেমন ট্রান্সক্রিপশন, ট্যাগিং, ফরম্যাটিং। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সবসময় মানুষের হাতেই থাকা উচিত। সাংবাদিকতায় মানবিক বোধ অপরিহার্য।’
তিনি আরও জানান, প্রথম আলো শিগগিরই “শর্টস” নামে একটি নতুন এআই নির্ভর ফিচার চালু করতে যাচ্ছে, যা মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত পাঠযোগ্য সংবাদ প্রদান করবে। এ ছাড়াও পাঠকরা এখন নিজের পছন্দ অনুযায়ী খবর কাস্টমাইজ করতে পারবেন এমন একটি ইন্টারফেসও চালু হচ্ছে। তিনি জানান, প্রথম আলো সম্প্রতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক এআই নীতি বাস্তবায়ন করেছে, যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত হয় একটি স্কোপিং রিপোর্ট, যা দক্ষিণ এশিয়ার এআই ভিত্তিক সাংবাদিকতা শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে। এটি উপস্থাপন করেন ড. সামীক্ষা কৈরালা (সহকারী অধ্যাপক, কাঠমান্ডু বিশ্ববিদ্যালয়) এবং জারিন তাসনিম (প্রভাষক, এমসিজে, এনএসইউ)।
ড. কৈরালা বলেন, ‘সাংবাদিকতায় এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিক দিকনির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—নীতি উদ্ভাবনের পরে নয়, আগে থেকেই তা নির্ধারিত হওয়া উচিত।’
জারিন তাসনিম বলেন, ‘এআই কেবল কনটেন্ট তৈরির বিষয় না, এটা কিভাবে দর্শক-শ্রোতাদের প্রভাবিত করে, বিভক্ত করে এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে তা বোঝা দরকার। এনএসইউতে বহুমাত্রিক পাঠক্রমের প্রেক্ষিতে আমাদের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রিসোর্স ভাগাভাগি করে এগিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও সহকারী অধ্যাপক ড. সৌমিক পাল বলেন, ‘থিওরি ও বাস্তব সাংবাদিকতা অনুশীলনের মাঝে যে ফাঁক, তা দূর করতে হবে। এআই এর আইনি, নৈতিক এবং দর্শকপক্ষীয় দিকগুলোকেও আমাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; শুধু বিকল্প হিসেবে নয়, বাধ্যতামূলকভাবে।’
ড. রিজওয়ানুল ইসলাম, ডিন, স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘এআই আমাদের সাংবাদিকতা শিক্ষাকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। সাংবাদিকতা শিক্ষার ভবিষ্যৎ আন্তঃবিভাগীয়। আমাদের মিডিয়া, কম্পিউটার সায়েন্স, আইন ও নীতিমালা একত্রিত করে হাইব্রিড প্রোগ্রামের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই সংলাপ বন্ধ হওয়া চলবে না, বরং এটি অব্যাহত রাখা জরুরি।’
সেমিনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।