শিক্ষার্থীদের অতিমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল নির্ভরতা নিরুৎসাহিত করবো: শিক্ষামন্ত্রী

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী  © টিডিসি ফটো

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, অতিমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল নির্ভরতা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করা হবে। তাদের ফলাফল নির্ভরতা থেকে নিরুৎসাহিত করা হবে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি দক্ষতা অর্জন, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মজগতে সহজে প্রবেশের জন্য বৈশ্বিক মানের দক্ষতা অর্জন করতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার (১০ মার্চ) বিকেলে বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একাদশ সমাবর্তনে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা সম্মেলন কেন্দ্রে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা যাবে না। যেকোনো বয়সেই এবং যেকোনো স্থানেই শিখতে হবে। শেখা অব্যাহত রাখতে হবে। শেখার জন্য সবসময়ই উদার মানসিকতা রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: ৫৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পকেটে বার্ষিক উদ্বৃত্ত ১,২৫০ কোটি টাকা

আমাদের তরুণদের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এজন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। সেজন্য দেশের স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়—যেখানেই হোক না কেন, আমরা যেন শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কারিগরি দক্ষতা এবং সফটস্কিলও বাড়াতে কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতাও বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতায়ও জোর দিতে হবে। দেশেই অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য নিজেকে কর্ম উপযোগী করে গড়ার পরামর্শও তার। নিজেদের দক্ষতা না বাড়লে সামনেও আমাদের দেশে দক্ষ লোক হিসেবে বিদেশিরা আসতেই থাকবে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমেরিকার জর্জটাউন ইউনিভাসিটির অধ্যাপক ড. ফ্রাঙ্কো গান্ডোলিফ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। 

আরও পড়ুন: ‘পুঁথিগত শিক্ষার কারণে উচ্চশিক্ষার পর শিক্ষার্থীরা বেকার থাকছে’

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান। ভ্যালিডেকটোরিয়ান বক্তব্য প্রদান করেন সাংবাদিকতা বিভাগের গ্র্যাজুয়েট মো. মেহরাবুল হক। 

স্বাগত বক্তব্যে ডিআইইউ চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্ভাবনকে অনুঘটক মনে করেছে এবং এর অ্যাকাডেমিক সিস্টেমের সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করেছে। আমরা আধুনিক ফ্ল্যাগশিপ ইউনিভার্সিড হিসেবে বিকাশের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, অ্যাক্সেস এবং ইক্যুইটির প্রতি নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে শিক্ষাদান, শেখার, গবেষণার মান এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক আর্থ-সামাজিক চাহিদা মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র উদ্ভাবনী বিষয়ক কোর্স চালু করেছে, একাডেমিয়া--শিল্প সম্পর্ক জোরদার করেছে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারিত করেছে, শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাকে একীভূত করেছে, পাঠ্য বহির্ভূত কার্যক্রমের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতরণ কার্যক্রম ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করেছে। একটি জেড জেনারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তামূলক পরিষেবা এবং সুবিধাগুলিতে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে আমরা একটি ব্যাপক শিক্ষামূলক ইকো সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করেছি। 

আরও পড়ুন: ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতেই হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্যের গল্প উল্লেখ করে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি, নাসা স্পোর্টস অ্যাপ চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় গ্লোবালী চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানে আমরা নিয়মিত জব উৎসব এবং জব প্লেসমেন্টের আয়োজন করছি, এবং ইউএনডিপি-স্পন্সর ইভেন্ট হিসেবে ২০০ প্রতিষ্ঠান ছাত্রদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করার জন্য অংশগ্রহণ করেছিল। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বর্তমানে ‘ডোয়ার্স এবং লিডারস’ বিকাশের উপর সর্বোচ্চ মনোযোগ নিবন্ধ করছে যারা এ গ্রহের জন্য একটি টেকসই বর্তমান এবং প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্ভাবন এবং সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে। 

এবারের সমাবর্তনে ৬ হাজার ২৮৪ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১২ জন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর, চেয়ারম্যান ও উপাচার্যসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ