বিওটি, রেজিস্ট্রেশন না থাকাসহ শুরুতেই নানা অভিযোগ ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ০৬:২৩ PM , আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ০৮:৫১ PM
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি), রেজিস্ট্রেশন না থাকাসহ শুরুতেই একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মালয়শিয়ার শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়কে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। আজ বুধবার (৩ মে) ইউজিসির সিবিএইচই শাখা থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি মালয়শিয়ার শীর্ষ বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু করেছে। গত মার্চের শুরুতে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন। এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রথম শাখা ক্যাম্পাস হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন লাভ করে। এর ক্যাম্পাস রাজধানীর বনানীতে স্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস চালুর ঘোষণা মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের
এদিকে, সম্প্রতি ২১টি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং ৩টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তির আবেদন গ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে আবেদন গ্রহণ ও ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে মাসের শেষের দিকে পাঠদানের পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই মাঝে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা থেকে এসব অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি চারটি ধারা লঙ্ঘন করেছে। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন-২০১৪ এর ৪(১), (৬); ৭(চ), (ঞ); ১১(১), (গ) এবং ১২(২) ধারা লঙ্ঘন করেছে ইউসিএসআই।
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন-২০১৪ এর ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কোন ব্যক্তি কমিশনের নিকট হইতে সাময়িক অনুমতিপত্র বা, ক্ষেত্রমত, সনদপত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করিতে পারিবে না।’’
৪(৬) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘উপবিধি (৪) এর অধীন আবেদন প্রাথমিকভাবে মঞ্জুর করা হইলে কমিশন সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্র সরকারের নিকট উহার সুপারিশসহ পেশ করিবে এবং সরকার প্রত্যেকটি মঞ্জুরকৃত আবেদনপতত্রের জন্য একটি করে রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করিবে।’’
৭(চ)-তে বলা হয়েছে, ‘‘বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকিতে হইবে।’’ (ঞ)-তে বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তিন (০৩) সদস্য সমন্বয়ে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকিতে হইবে।’’
১১(১) এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত পর্যালোচনাপূর্বক শিক্ষক, বা কর্মচারী হিসাবে নিয়োগের অনুমতি প্রদান করিবে।’’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু
১২(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কমিশন, উপ-বিধি (১) এর অধীন প্রাপ্ত আবেদনপত্র যাচাই বাছাইপূর্বক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, আবেদনকারী বিধি ৭ এ বর্ণিত শর্ত পূরণ করিয়াছে তাহা হইলে সরকারের নিকট সেই মর্মে একটি প্রতিবেদন পেশ করিবে এবং সরকার, কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশের ভিত্তিতে, আবেদনকারীর অনুকূলে শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন বা পরিচালনার জন্য সনদপত্র ইস্যু করিবে।’’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশে মালয়েশিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে একাডেমিক কাযক্রম চালুর অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা অনুমতি না নিয়েই শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর তাদের শোকজ করা হয়েছে। জবাব দেওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইউজিসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪’-এর বিধি ৪(১), ৪(৬), ৭(চ) ও (ঞ), ১১(১) (গ), ১২(২) এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ধারা এবং উপধারাসমূহের) UCSI University Bangladesh Campus-কর্তৃক ব্যত্যয় ঘটেছে বলে কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পত্রের শর্তসমূহ প্রতিপালন করা হয়নি। এ বিষয়ে যথোপযুক্ত জবাব আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনের প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’’
এই চিঠিটি ইনসাইট ইনস্টিটিউট অফ লানিংয়ের চেয়ারম্যান বরাবর ইস্যু করেছে ইউজিসি। এই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাদ আনোয়ার।
তবে, চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার বিষয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাদ আনোয়ার অস্বীকার করেছেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসির এ বিষয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? আমিতো এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত নয়। এমনকি ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি’র বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন।
তবে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি’র বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে তিনজন উপদেষ্টা রয়েছেন। এরমধ্যে অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাদ আনোয়ার একজন। তিনি এ দুই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও আগ্রহ দেখান ইউজিসি কী নিয়ে এবং কেন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে-সে বিষয় নিয়েও।