যুবলীগ থেকে ওমর ফারুক বহিষ্কার

  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি ক্যাসিনো কাণ্ডসহ নানা অভিযোগে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রবিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আসন্ন কংগ্রেসকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন আওয়ামী যুবলীগের নেতারা। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে যুবলীগ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সভায় যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র তাপস। এর আগে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে উচ্চবাক্য করেছেন তাপস।

রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পূর্ব নির্ধারিত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রেসিডিয়াম, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ও শেখ আতিয়ার রহমান দিপু উপস্থিত ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বৈঠকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

তবে বৈঠকে অংশ নিতে শেখ ফজলুর রহমান মারুফ গণভবনে গেলেও তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, এই বৈঠকে যুবলীগের আসন্ন কংগ্রেসে কে সভাপতিত্ব করবেন সে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়। কারণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও অভিযোগ ওঠায় তাকে দিয়ে সভাপতিত্ব করা হচ্ছে না। এইজন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপসকে।

এছাড়া সম্মেলনে যুবলীগের কমিটিতে যারা আসবেন তাদের বয়সসীমা কী হবে সেটিও এ বৈঠকে নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব নেতাদের দিক নির্দেশনা দেন।

এ বৈঠকে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ শামসুল আবেদীন, শহিদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুঁইয়া মাখন, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু, যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহম্মেদ মহি, সুব্রত পাল, মনজুর আলম শাহীন, নাসরিন জাহান চৌধুরী শেফালী, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, আমির হোসেন গাজী, মুহা. বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, আবু আহম্মেদ নাসিম পাভেল, আসাদুল হক, এমরান হোসেন খান, আজহার উদ্দিন ও ফারুক হাসান তুহিন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর নিজেকে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে গুটিয়ে নেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রায় এক মাস ধরে ধানমন্ডির নিজ বাসায় অনেকটা ‘নির্বাসিত’ জীবন যাপন করছেন। নেতা-কর্মীরাও যাচ্ছেন না তাঁর কাছে। যুবলীগ চেয়ারম্যানের নীরব পতন হয়েছে বলে মনে করছেন নেতা–কর্মীরা।

দেখুন: যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ ফজলে নূর তাপস

যুবলীগ সূত্র জানায়, ক্যাসিনোতে অভিযান শুরুর দিন (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগের চেয়ারম্যান মিরপুরে সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এত দিন আঙুল চুষছিলেন?’ গত ২০ সেপ্টেম্বরও উত্তরার সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। এরপর থেকে তাঁকে সংগঠনের কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি।

৩ অক্টোবর ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাঁর নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন, বিবরণীর তথ্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সরকারের অনুমতি ছাড়া তাঁর বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে ৬ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা দেয় অভিবাসন পুলিশ। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যেসব রাজনৈতিক নেতার নাম এসেছে, তাঁদের সবার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়।

শেখ ফজলে নুর তাপস পেশায় একজন আইনজীবি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন “বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ”র সদস্য সচিব। তাপস ২০০৮ সালে প্রথমবারের মত সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরপর তিনবার ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকা হলো ঢাকা-১২।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ ফজলে নূর তাপসের দাদা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ফুফু।


সর্বশেষ সংবাদ