অপরিবর্তিত শারীরিক অবস্থা
বিদেশ নয় দেশেই চিকিৎসা চলবে খালেদা জিয়ার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৯ PM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪ PM
শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন থাকা সত্ত্বেও দেশের চিকিৎসার উপর আস্থা রাখছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সেই কারণে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেয়ার সিদ্ধান্ত এখন আপাতত হচ্ছে না। দেশেই উনার চিকিৎসা চলবে। নতুন করে লন্ডন নেয়ার সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানানো হবে।
বিএনপি ও চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও বিমান ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত নয় বলে তাকে এই মুহূর্তে লন্ডন নেয়া হচ্ছে না। দেশে রেখেই তার চিকিৎসা চলবে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে পরে নতুন করে তাকে লন্ডনে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন, বিএনপি ও চিকিৎসকদের মাধ্যমে এ তথ্য জানানোর পর থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কাতার রাজপরিবার থেকে তাকে লন্ডনে নিতে রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বিমান ভ্রমণের মতো শারীরিক পরিস্থিতি না থাকায় দুইবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার নির্ধারিত শিডিউল পরিবর্তন হয়।
গেল ২৩ নভেম্বর রবিবার রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপর থেকে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন, বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এমন অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জোর প্রস্তুতি নেয়া দল ও পরিবার।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান। পেশায় চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমান মূলত শাশুড়িকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই দেশে ফেরেন। বর্তমানে তিনি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তদারকি করছেন।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায়, ডা. জোবায়দা রহমান জানিয়েছেন, তার শাশুড়ি চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়তে চান না। তিনি দেশেই চিকিৎসা নিতে চান। খালেদা জিয়াকে এই অবস্থায় নিয়ে বিমানযাত্রা উপযুক্ত মনে করছে না তার গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। প্রতিদিনই অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। একটি জটিলতা কেটে গেলে নতুন করে আরেকটি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। একটি রোগের প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আরেকটি বেড়ে যায়। দীর্ঘদিনের পুরোনো লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি নিয়ে উদ্বিগ্ন মেডিক্যাল বোর্ড। শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবছে না বোর্ড।
আগেরদিন সোমবার সন্ধ্যায় বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) উন্নতি আছে। তবে আহামরি বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণে সেরে উঠতে সময় লাগবে। এই দফায় ওনার উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। ওনার মাল্টিপল ডিজিস (বহুমুখী জটিলতা) থাকায় একটি রোগ থেকে সেরে উঠলে আরেকটি দেখা দেয়। লিভার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন (ঝুঁকিপূর্ণ সীমা) অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিডনির অবস্থার অবনতি হয়।
চিকিৎসক বলেন, মেডিকেল বোর্ড প্রতি রাতে বৈঠকে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা রোগ নিয়ে আলোচনা করেন। রিপোর্ট দেখে কিছু ওষুধ বন্ধ করেন, আবার চালু করেন। কিছু ওষুধের মাত্রা কমান কিংবা প্রয়োজনে বাড়িয়ে দেন। দেশে ফেরার পর বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান।
জানা গেছে, ৮০ বছর বয়সি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর রবিবার রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭ নভেম্বর তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দেশি-বিদেশি দুই ডজনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছে।