‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ফোরাম নির্বাচিত জাতীয় সংসদ’

সালাহউদ্দিন আহমদ
সালাহউদ্দিন আহমদ  © সংগৃহীত

‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ফোরাম নির্বাচিত জাতীয় সংসদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, জুলাই হচ্ছে, জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক সমঝোতার একটি ঐহিতাসিক পূর্ণাঙ্গ দলিল। যা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সেই বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ফোরাম হচ্ছে একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এখানে কোন দলের সেই বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই।

আজ রবিবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের সভাপতিত্বে ও ফারুক খানের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন : নভেম্বরে তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে যুক্ত হলো যদি-কিন্তু

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সেই জাতীয় সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যাতে জাতীয় সংসদ বাধ্য থাকে সেই একটা আইন ভিত্তি করতে এখন সেই প্রস্তাব জাতীয় সংসদের কাছ থেকে প্রস্তাব অথবা সুপারিশ সরকারের কাছে দেয়া সেই সুপারিশটা দেয়ার পরেই আমরা জানতে পারবো কি প্রক্রিয়ায় সেই আইনটা রচনা করতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি সকলের অবগিতর জন্য বলতে চাই, সকল রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, দেশে আবেদন করতে চাই, আমরা যেন কোনভাবেই আইনানুগ প্রক্রিয়ার বাইরে না যাই। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরে না যাই। আমরা যেন এই জাতিকে একটি সুষ্ঠ নিয়মতান্ত্রিক ধারার মধ্যে দিয়ে পরিচালনা করি।

সালাহউদ্দিন বলেন, কারণ অনেকেই আবেগের বশবর্তী বলে থাকেন যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে সে অভিপ্রায়ের অবনতি ঘটবে বলে অনেক কিছু বৈপ্লবিক আদেশ জারি করা যায়… এই বক্তব্য হচ্ছে আবেগের বক্তব্য। কারণ জনগণের অভিলাষকে বাস্তবায়ন করার জন্যেই আমরা সবাই সংবিধানের আশ্রয় নিয়েছি এবং সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছি এবং এখনো পর্যন্ত আইনানুগভাবে সাংবিধানিকভাবে আমরা এই রাষ্ট্রটা পরিচালনা করছি।

এখানে কিছু কিছু বিষয়ের মধ্যে অনেকে বিতর্ক নিয়ে আসেন যে, প্রকৃত সাংবিধানিকতাকে কী রক্ষা করা গিয়েছে? আমরা সবসময় উত্তর দিয়েছি। যত কিছু আমরা সংবিধানের ১০৬ মধ্য দিয়ে আমরা বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরও কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের কাছে এমন মনে হয় যে, সংবিধানের কিছু কিছু ধারা বোধহয় এগ্রোগ্রিয়েটেড হয়েছে। 

আরও পড়ুন : একটা দল শেখ হাসিনার মতোই মিথ্যাচার আর ভণ্ডামি করছে: রিজভী

কিন্তু সেটার লেজিটিমেসি পরবর্তী পার্লামেন্টে অবশ্যই সরকারের কর্মকাণ্ডকে যখন বৈধতা দেয়া হবে, তখন সেটার সংবিধানের চতুর্থ তফশিলে ধারণ করে তাকে বৈধতা দেয়া হবে, রেটিফিকেশন করা হবে। অন্যান্য আইন কানুন যেগুলো পাশ হয়েছে সেগুলো রেটিফিকেশন লাগবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি কোন না কোন ব্যত্যয় হয়ে থাকে সেই ব্যত্যয় গুলোকেও বৈধতা দেয়া হয়ে থাকে…এটাই নিয়ম। এটাই আমাদের ঐতিহ্য এবং সাংবিধানিক ঐতিহ্য।

সুতরাং আমরা সেই প্রোফাইল নিয়ে যেন আবার এমন কোন অসাংবিধানিক পদ্ধতির দিকে না যাই যাতে ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠে যে, যার আদেশ জারি করার কথা তিনি করলেন না। যেভাবে আদেশ জারি করার কথা সেভাবে বলো না, সেই আদেশের ভিত্তি যদি আইনানুগ না হয় তাহলে সেই আদেশের আইন কিভাবে রচিত হবে এবং সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য কিভাবে আবার পার্লামেন্টকে নেবে...এই কথাগুলো যেন আমরা বলি।

ব্যাখ্যা দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ যেটা প্রণীত হয়েছে, যেভাবে সবাই স্বাক্ষর করেছেন এবং সেখানে নোট অব ডিসেন্ট সহকারে সংক্ষিপ্ত হুবহু এই জুলাই জাতীয় সন বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগণের সকল সম্মতির ভিত্তিতে যখন একটা পার্লামেন্টে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হবে তখন সেই জায়গা থেকে কোন সংসদ সদস্য এবং সে জাতীয় সংসদ সরতে পারবে না এবং সেইটাই হচ্ছে প্রকৃত জনগণের অভিপ্রায় এবং কনস্টিটিউশন পাওয়ার। জনগণের কনস্টিটিউশন পাওয়ারটা গণভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে বলেই সেই পার্লামেন্ট তার বাইরে যেতে পারবে না…এটা অপর নামই হচ্ছে এই ‘কনস্টিটিউট পাওয়ার’ বা দার্শনিক ক্ষমতা জনগণের সার্বভৌমত্বের অধিকারী হিসেবে আর্টিকেল সেভেন অনুসারে।

আরও পড়ুন : একটা দল শেখ হাসিনার মতোই মিথ্যাচার আর ভণ্ডামি করছে: রিজভী

এনসিপি প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমার ভাই যারা নতুন রাজনৈতিক দল করেছেন-এনসিপি…তাদের অনেক রকমের বক্তব্য আছে যেগুলো আমরা নিজেরাও ধারণ করি কিন্তু সেগুলোকে একটা বাস্তব রূপ দিতে হবে এবং বাস্তবের নিরিখে কথা বলতে পারি। আমরা যেন এমন কোন প্রস্তাব না দেই যাতে করে ভবিষ্যতে সেই প্রস্তাবগুলো সে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেউ জুডিশিয়ারের কাছে নিয়ে যেতে চায় এবং সেগুলোর মধ্যে দিয়ে যা আমাদের এই টোটাল প্রক্রিয়াটাকে কেউ একসময় অবৈধ বলে যেন আওয়াজ না দিতে পারে।

তিনি বলেন, এগুলো আমি আজকের জন্য বলছি না, আগামী পাঁচ বছরের জন্য বলছি না, আগামী ১০ বছর পরে বা ১৫ বছরে যাতে এই প্রশ্নটা নিয়ে কেউ আদালত না যেতে পারে সেরকম একটা ভিত্তি আমাদের এখনই রচনা করতে হবে।আমরা অতি সাবধানে আমাদের অর্জিত যে সাফল্য সেই সাফল্যকে আরো সাফল্যের জন্য সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য সমুন্নত রাখতে হবে মন্তব্য করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা চাই, আমরা সবাই যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, যেভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে বিজেপি হয়েছিলাম, যেই কারণে ফেসিবাদের পতন হয়েছে, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে সেইরকম ঐক্য যেন আমরা বজায় রাখি। এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আমাদের সামনে ফিরে এগিয়ে চলে চলার একমাত্র শক্তি। আর যদি সেই ঐক্য কোন কারণে আমাদের মধ্যে নষ্ট হয় তাহলে সেটা ফ্যাসিবাদকে ভিন্নভাবে টেনে নিয়ে আসবে। আমি আহ্বান জানাব, আমরা যেন সেদিকে না যাই আমরা সবাই জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধতা থাকবো একটি প্রশ্নে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র…এই প্রশ্নে আমরা এক থাকব। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্যাসিবাদকে যেন আমরা কোনভাবে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে দেব না… সেই জায়গায় যেন আমরা এক থাকি।


সর্বশেষ সংবাদ