কবে মুক্তি মিলবে জামায়াত নেতা এটিএম আজাহারের, যা জানালেন আইনজীবী
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে সকল অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবার (২৭ মে) তারিখে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘আদালত চারটি অবজারভেশন দিয়েছেন। তারমধ্যে প্রথমটি বলেছেন, অতীতের রায়ে বাংলাদেশ সহ এই ভারতীয় সাব কন্টিনেন্টে ক্রিমিনাল ব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচাইতে বড় ভুল। দ্বিতীয়ত বলেছেন, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণ এসেসমেন্ট ছাড়াই এটিএম আজহারকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন আদালত যে, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিচারের নামে অবিচার।’
আরও পড়ুন: গবেষণায় ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা পাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা
তিনি আরও বলেন ‘যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিক ভাবে বলতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে আদালত আজহার সাহেবকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন। এটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নজীরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে, মিথ্যে পরাভূত হয়েছে।’
শিশির মনির বলেন, ‘আমরা একটা শর্ট অর্ডার চেয়েছি, অ্যাডভান্স অর্ডার চেয়েছি, আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আমরা চেষ্টা করব আজকে অথবা কালকের মধ্যে যেন এই শর্ট অর্ডারটা প্রসেস হয়ে এটিএম আজহার সাহেব মুক্তি পেতে পারেন, এজন্য সকল আইনি ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।’
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে খালাস
এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে রংপুরে সংঘটিত গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই তিনি রিভিউ আবেদন করেন, যেখানে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তার আপিল শুনানির অনুমতি দেন। এরপর নিয়মিত আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দেন আদালত, যেখানে তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার অবসান ঘটলো।