সারজিসকে কড়া জবাব রাশেদের, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

রাশেদ খান ও সারজিস আলম
রাশেদ খান ও সারজিস আলম  © টিডিসি সম্পাদিত

রংপুরে গাড়ির বহর নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারাভিযান, বিতর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এসব অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ হিসেবে দাবি করে রবিবার (২৮ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি বিস্তারিত পোস্ট দেন তিনি। সেখানে তিনি দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি কোনো অবৈধ অর্থ গ্রহণ বা অনৈতিক সুপারিশের সঙ্গে জড়িত হননি।

সারজিস তার পোস্টে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। তাদেরই একজন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। তিনি রাশেদ খানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছেন। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি, তিনি যদি আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি রাজনীতি ছাড়ব আর না পারলে তিনি রাজনীতি ছাড়বেন।’

সারজিসের চ্যালেঞ্জের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাশেদ খান নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ এক জবাব পোস্ট করেন।  সোমবার (২৯ এপ্রিল) ‘সারজিস আলমের পোস্টের জবাব’ শীর্ষক লেখায় রাশেদ খান বিস্ফোরক তথ্য উপস্থাপন করেন রাশেদ খান।

ফেসবুক পোস্টে রাশেদ খান  বলেছেন, ‘কয়েকদিন আগে সারজিস আলম আমাকে কল করেন। ১ ঘণ্টার অধিক সময় মোবাইলে তার সাথে কথোপকথন হয়। তিনি আমার কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। বিস্তারিত আলাপ তুলে ধরতে হলে অনেক কথা লেখা লাগবে। কথোপকথনের সারসংক্ষেপ হলো, আমি তার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছি। তিনি ভুল ভাঙাতে চেষ্টা করেন ও আমাকে বলেন, আমি যেন তাকে নিয়ে একটা পজিটিভ পোস্ট করি। কিন্তু আমি করিনি, কারণ আমি যে-সকল বক্তব্য দিয়েছি, তার যথেষ্ট আলামত ও তথ্য উপাত্ত রয়েছে।’

দুর্নীতি ও সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগে সম্প্রতি গাজী সালাউদ্দীন তানভীরকে দল থেকে অব্যাহতি দেয় এনসিপি। তানভীরের সঙ্গে সারজিস আলম নানাভাবে যুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন রাশেদ খান। পোস্টে তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করে লিখেছেন,  ‘ছাত্র সমন্বয়ক নামধারী গাজী সালাউদ্দীন তানভীর সচিবালয়ে নিজেকে সারজিস ও হাসনাতের পরামর্শে আসার কথা স্বীকার করেন।’ তথ্যপ্রমাণ হিসেবে তিনি ছবি ও দৈনিক যুগান্তর সংবাদদের লিংক উপস্থাপন করেছেন। এছাড়াও রাশেদ খানের পোস্ট করা অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, ৮ মাস আগে আনসার ক্যু-এর দিন গাজী সালাউদ্দীন তানভীরকে নিয়ে সচিবালয় থেকে বের হচ্ছেন সারজিস আলম ।

রাশেদ খান আরও লিখেছেন, ‘সারজিসের প্রভাব খাটিয়ে ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেন তানভীর। আনসার ক্যু-এর দিন সারজিসের সাথে তানভীর কেন সচিবালয়ে প্রবেশ করলেন ও একসাথে বের হলেন?’

রাশেদ খান আরও লিখেছেন, ‘ডিসি নিয়োগের কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত তানভীর যে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হয়েছেন, সেই তথ্যও কেউ জানতো না। সেটিও আমি সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠজন থেকে পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন সারজিস এনসিপিতে পদ দিতে রেফারেন্স করলেন? এর প্রেক্ষিতে আমি সারজিসকে প্রশ্ন করি। সে আমাকে উত্তর দেন, শুধু কি আমি একাই রেফারেন্স করেছি, আর কেউ করেননি? কথোপকথনের সময় হাসনাতের নাম আসে। তখন, তিনি বলেন, তাহলে কেন আপনি শুধু আমার নাম নেন? এনসিপি সূত্রমতে, গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের সাথে সারজিস ও হাসনাতের দুজনেরই ঘনিষ্ঠতা আছে। যেটা সারজিসও স্বীকার করেছেন। এবং তাদের দুজনের রেফারেন্সই ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তি এনসিপির মত তরুণদের দলে গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছে!’

রাশেদ খান আরও লিখেছেন, ‘দ্বিতীয়ত, যখন এনসিটিবির কেলেঙ্কারি সামনে আসে, তখন রাখাল রাহাকে নিয়ে সারজিস পোস্ট করলেও গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। কেন গাজী সালাউদ্দীন তানভীরকে এড়িয়ে গেলেন সারজিস? তার সাথে ঘনিষ্ঠতা এজন্য? ডিসি কেলেঙ্কারির সাথে অভিযুক্ত থাকা ব্যক্তি পুনরায় কাদের সহযোগিতায় এনসিটিভিতে কাজ করার সুযোগ পেলেন?’

গাজী সালাউদ্দিন তানভীর সাদা প্রাডো গাড়ি নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে যেতেন তার প্রমাণ হিসেবে ছবি উপস্থাপন করে রাশেদ খান লিখেছেন, ‘তৃতীয়ত, তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাদা প্রাডো গাড়ি নিয়ে যেতেন, কারা কারা তার গাড়ির অপেক্ষায় থাকতেন? ছবি দেখলেই তা বোঝা যাবে।’

রাশেদ খান আরও লিখেছেন,  ‘চতুর্থত, যখন গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের উপর শহীদ মিনারে যে-সকল আহতলীগের সদস্যরা হামলা করে, এদের জমিন করাতে সহযোগিতা করে সারজিস আলম ও জুলাই ফাউন্ডেশনের মীর মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ। গ্রেপ্তারের ১১ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পায় তারা। এই জামিনের নেপথ্যেও ছিলেন সারজিস আলম।’

রাশেদ খান আরও লিখেছেন, ‘এছাড়া গণমাধ্যমে সারজিসের বিষয়ে সেসব তথ্য এসেছে, আমি সেগুলো নিয়ে বিভিন্নসময় কথা বলেছি। এমনকি এনসিপির কয়েকজন নেতাও আমাকে বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী পুনর্বাসনের অভিযোগ (একজন সাংবাদিক প্রমাণসহ পোস্ট করেছেন) এবং বিভিন্নসময় ডা. জারাসহ তাদের নেতাদের পোস্টের আলোকে বিভিন্নসময়ে মন্তব্য করেছি। সারজিসের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব তার দল ও সরকারের। তার যদি চ্যালেঞ্জ করতে এতোই মন চাইতো, তবে সংবাদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। কিন্তু ৭ মাসেও তিনি সেই চ্যালেঞ্জ করেননি! অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন তিনি এতো আশ্রয়প্রশয় দেন? কার সহযোগিতায় তানভীর সচিবালয়ে ও এনসিটিবিতে ঢুকলেন? এসবের তদন্তে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন তদন্ত কমিটি গঠন করছে না? তাহলেই তো জানা যাবে, সারজিস আলম দোষী না নির্দোষ?’

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence