দেশের রাজনীতিতে আট মাসে ২৬ নতুন দল
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৯ AM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৯ PM
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) দৃশ্যপটে আসার পর থেকে দেশে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার পরপরই গত আট মাসে একের পর এক আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম। বিবিসির এক তথ্য অনুযায়ী, এ সময় অন্তত ২৬টি নতুন নাম যুক্ত হয়েছে দেশের রাজনীতির তালিকায়।
এই নতুন দলগুলোর মধ্যে রয়েছে—নিউক্লিয়াস পার্টি, জনপ্রিয় পার্টি, জাগ্রত পার্টি, আমজনতার দল, আ-আম জনতা, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি) ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এছাড়াও আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, দেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) এবং জনতা পার্টি বাংলাদেশ প্রকাশ্যে আসে। আজ শনিবার আরেকটি দলের নাম ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
দলগুলোর নাম ও বিবৃতি দেখে স্পষ্ট যে তারা প্রত্যেকেই জনগণের প্রতিনিধিত্বের দাবি করছে, তবে তাদের আদর্শ, লক্ষ্য এবং সংগঠনের কাঠামো একেকটির একেক রকম। কারও কারও ঝোঁক রয়েছে গণআন্দোলনধর্মী রাজনীতির দিকে, কেউবা সরাসরি নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার কথা বলছে। আবার কিছু প্ল্যাটফর্ম নিজেদেরকে আন্দোলনের শক্তি হিসেবে তুলে ধরলেও আদতে তারা ভেতরে ভেতরে জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
এই নতুন রাজনীতির তরঙ্গে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো—রাজনীতির বিকেন্দ্রীকরণ। অতীতে যেখানে ক্ষমতা ও বিরোধিতার কেন্দ্রে ছিলো বড় দুটি বা তিনটি রাজনৈতিক দল, সেখানে এখন রাজনীতির ময়দানে ছড়িয়ে পড়েছে বহু ছোট ও মাঝারি শক্তি। অনেকেই বলছেন, এটি একধরনের "রাজনৈতিক ব্যালকনির রাজনীতি", যেখানে নানান মত, চেতনা, স্বপ্ন এবং হতাশা একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে। কেউ এটিকে গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন বলছেন, কেউ আবার এটিকে ‘রাজনৈতিক খণ্ডীকরণ’ হিসেবে দেখছেন, যা ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই রাজনৈতিক দলগুলোর বড় অংশই তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত। এখনো পর্যন্ত এই দলগুলোর কেউই বড় কোনো নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, ফলে তাদের জনপ্রিয়তা কিংবা সংগঠনের বাস্তব সক্ষমতা যাচাই হয়নি। তবে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, জনমনের চাহিদা, এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের যে ধারা তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের রাজনীতি এক দীর্ঘ পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। এরা রাষ্ট্রব্যবস্থা, দুর্নীতি, এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে, কিন্তু একই সঙ্গে অভিজ্ঞতার অভাব ও সংগঠনের দুর্বলতা তাদের পথচলায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।