ছাত্রদের প্রতি মানুষের যে অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছিল, তা আজ চিড় ধরেছে: ভিপি নুর
- পটুয়াখালী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৪ PM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ AM

ছাত্রদের প্রতি মানুষের যে অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছিল, তা আজ চিড় ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর।
শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেলে গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গণঅধিকার পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে আদর্শিক ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনের মধ্যে দেখেছি, এখন তাদের অনেকের মধ্যেই সুবিধাবাদী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, এসপি অফিস ও থানায় তাদের অনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
নুরুল হক নুর আরও বলেন, ‘যেহেতু আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম আর নেই। এটি সকল মতাদর্শের মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। এখন সবাই যার যার রাজনৈতিক প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে।’
নুর বলেন, ‘গত সাড়ে ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে জেল খেটেছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে, আহত হয়েছে, ঘরবাড়ি ছেড়েছে এমনকি দেশে ছেড়েছে। কিন্তু তারপরেও জনগণের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসেনি। গত জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করে যা পারেনি। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। যে কোনো গণআন্দোলন তখনই সফল হয়, যখন জনগণ সরাসরি সম্পৃক্ত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম যতই রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ করুক না কেন, আল্টিমেটলি রাষ্ট্র চালায় রাজনীতিবিদরা এবং গণঅভ্যুত্থানের সুফল রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব জনগণের ত্যাগের প্রতিদান দেওয়া। যদি তারা জনগণের প্রত্যাশা ভুলে যায়, তবে জনগণ প্রতারিত হবে এবং রাজনৈতিক নেতারাও তার ভুক্তভোগী হবে।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘মেধাবী তরুণরা রাজনীতির বাইরে থাকায় দুর্বৃত্তরা রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই চিত্র আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখেছি। তাই মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। যদি ছাত্র নেতারা সরকারের মধ্যে না থেকে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলের মতো রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যান, তাহলে ভবিষ্যতে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।’
নুর বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছি। ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ছাত্রদের মধ্যে একটি প্রতিবাদের চেতনা ও দ্রোহের আগুন আমরা জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। সেই আগুনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন পেলে সংসদে গিয়ে আপনাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলবো।’ তিনি উল্লেখ করেন, গলাচিপার রামনাবাদ নদীর ব্রিজ বাতিল হয়ে যাচ্ছিল, যা উপদেষ্টাদের কাছে ঘুরে, মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় গিয়ে পুনরায় টেন্ডার করানো হয়েছে। আশা করি কাজ দ্রুত শুরু হবে।
ইফতার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের পটুয়াখালী জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. সৈয়দ নজরুল ইসলাম লিটন, সদস্য সচিব মো. শাহআলম, গলাচিপা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মো. জাকির হোসেন মুন্সি, পটুয়াখালী জেলা যুব অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মহিবুল্লাহ এনিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু নাঈম। এছাড়াও গণ অধিকার, যুব অধিকার, শ্রমিক অধিকার ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ইফতার অনুষ্ঠানে উপজেলার ৩ হাজার মানুষের জন্য আয়োজন করা হয়।