জাতীয় সংসদ নির্বাচন
তরুণ ভোটার টানতে ডিজিটাল প্রচারণায় জোর প্রার্থীদের
- ইরফান হক
- প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৫১ AM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:৪৬ PM
তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া সারা বিশ্বকে যেভাবে বদলে দিচ্ছে, তার জোরােলো প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশেও। এবারের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের ভোটের প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যম। তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং ই-মেইলের মাধ্যমে প্রার্থী এবং দলের প্রচার-প্রচারণা চলছে। সাথে যুক্ত হয়েছে মোবাইল এসএমএস, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দলের নেতিবাচক দিকগুলোও এ ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে ২ কোটি ২৫ লাখ তরুণ ভোটার হয়েছেন। এর মধ্যে সিংহভাগই এবার প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মোট ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ। এর ফলে এবারের নির্বাচনে তরুণদের ভোট যার বাক্সে যত বেশী পড়বে ক্ষমতার চেয়ারে বসা তার জন্য ততটা মসৃণ হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ৪০ বছরের বেশী বয়সী ভোটার ভোট কোন দল বা প্রার্থীর দিকে যাবে তা সাধারণত আগে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। নতুন ও তরুণ ভোটাররাই মূলত: ব্যবধান গড়ে দেন। আগের নির্বাচনগুলোতেও অনেকটা তা-ই দেখা গেছে। এবার তরুণ ভোটার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী। তাই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে প্রায় আড়াই কোটি তরুণ ভোটার।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার তরুণদের কাছে মাইকিং, ব্যানার, পোস্টারিং দিয়ে পৌঁছানো যাবে না। সিংহভাগ তরুণ অবসরে কিংবা কাজের সময় তাকিয়ে থাকেন মোবাইল, ট্যাব কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে। তাই তাদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই সবচেয়ে ভালো উপায়। বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইউটিউব।
এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি পার্পলবট ডিজিটাল’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ বলেন, “তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য দেয়াল পোস্টারিং ও লিখনের জায়গা ফেসবুকের ওয়াল, উঠান বৈঠকের স্থান ফেসবুক লাইভ, নাটিকা প্রদর্শনীর স্থান ইউটিউব ভিডিও এবং ব্যানারের স্থান স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট দিয়ে প্রচারণা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে। এটি এ সময়ের যোগাযোগের একটি বড় পরিবর্তন। যা প্রার্থীদের যোগাযোগ কৌশল পরিবর্তনেও ভূমিকা রেখেছে।”
ইতোমধ্যে তরুণদের টার্গেট করে রাজনৈতিক দলগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং ই-মেইলের মাধ্যমে প্রার্থী এবং দলের ক্যাম্পেইন করছে। তবে এ প্রচারণার একটি বড় অংশই আবার নেতিবাচক। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি নানা ধরণের প্রচারণার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। ফেসবুক এক্ষেত্রে এগিয়ে।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনের মূল প্রচারণা শুরু হওয়ার কথা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বরের পর থেকে বা ভোট গ্রহণের ২১ দিন আগে থেকে। এর মধ্যে যারা নিজের উদ্যোগে পোস্টার-ব্যানার ছাপিয়ে যেখানে-সেখানে টাঙ্গিয়েছিলেন, সেগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও শহরের নানা জায়গায় টানানো এসব ব্যানার-পোস্টার সরাতে দেখা গেছে।
কিন্তু ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বা প্রচারণার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম-কানুন না থাকায় তুমুল পাল্টাপাল্টি প্রচার-প্রচারণা চলছে এ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। আর এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচারণার কৌশল ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনের দুই প্রান্তে থাকা দলগুলোকে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় কাভার ফটোই করা হয়েছে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে আর সেখানে লেখা রয়েছে ‘নৌকা জনগণের মার্কা জননেত্রী শেখ হাসিনা’। এ পেজটিতেই একটি ইভেন্ট পেজ খোলা হয়েছে - যার শিরোনাম ‘৩০ ডিসেম্বর সারাদিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন’।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নানা বিষয় উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হচ্ছে এ পেজ থেকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রচারণার জন্য ছবি, ভিডিও, লোগোসহ নানা ধরণের কন্টেন্ট দেয়া হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ওয়েবসাইটে ডিজিটাল প্রচার তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় কাভার ফটো হিসেবে খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি চেয়ে একটি ব্যানার রয়েছে। তারপর ২০০৫ সালে একটি অনুষ্ঠানে দেয়া দলের নেতা তারেক রহমানের একটি বক্তব্য রয়েছে। সাথে রয়েছে ধানের শীষ হাতে তারেক রহমানের একটি ছবি। এছাড়া পেজটিতে বিএনপির নির্বাচন সম্পর্কিত নানা ব্রিফিংয়ের ছবি ও বক্তব্য রয়েছে। বিএনপির অফিশিয়াল ওয়েব ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হবে বলে দলটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা ফেসবুকে প্রার্থীর ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এতে লাইক কমেন্ট করছেন অন্যরা। পড়ছে নেতিবাচক মন্তব্যও। বিভিন্ন প্রার্থীর কার্যক্রমের ওপর ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বাড়ছে ভিউ-লাইক।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কার্যক্রমের প্রতিফলন আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট ও ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় রয়েছে। আমরা নেতিবাচক প্রচারণায় বিশ্বাস করিনা। তবে বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়া আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবেন, সেটিই হবে ডিজিটাল প্রচারণায় আমাদের মূল উপজীব্য বিষয়। তবে বেনামে কোনো প্রচারণার সাথে তার দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে তরুণরা আবেগের চেয়ে বিবেককে প্রাধান্য দিবে। দল এবং প্রার্থীর ভালো-মন্দ বিচার করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এটা বিচার করতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেশি গুরুত্ব দিবে। যেহেতু এখানে দল এবং প্রার্থীর ভালো-মন্দ বিচার করার অনেক বিষয় উঠে আসছে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র বোরহান উদ্দীন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণায় তরুণ ভোটারদের বেশি প্রভাব ফেলবে। কেননা অধিকাংশ তরুণ ভোটারের হাতে স্মার্ট ফোন রয়েছে। এতে তারা প্রতিনিয়তই অনলাইন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কানেক্টেড থাকে।
মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবির নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আবারও ক্ষমতায় আসুক। তিনি বলেন, এবারের ভোটে তরুণ প্রজন্ম অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। তরুণরা যেহেতু ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব, সেহেতু প্রার্থী ও দলের কর্মকান্ড দেখে কাকে ভোট দিবে সেটা সিদ্ধান্ত নিবে।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সাদিয়া আকন্দ স্বর্ণা নামের এক ছাত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্মের সবকিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেন্দ্রিক হওয়াতে ভোটে এটার প্রভাব পড়বে। ভালো-মন্দ হিসাব-নিকাশ করে তারা তাদের ভোট সঠিক প্রার্থীকে দিবে।