সেই ৪ জুলাই যোদ্ধার বিষপানের নেপথ্যে যা জানা গেল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০৮:১৬ PM , আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০৪:৩৬ PM

জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো চার যুবক পুনর্বাসনসহ দুই দাবির প্রেক্ষিতে রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা অবস্থায় বিষপান করেছেন। গতকাল রবিবার (২৫ মে) দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে এক বৈঠকের সময় এই ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে জুলাই আহত যোদ্ধাদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা মন্তব্য ও পাল্টা-বক্তব্য।
আজ সোমবার (২৬ মে) সকালে সরেজমিনে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে জুলাই আন্দোলনে আহতদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপক্ষ আরেক পক্ষকে আন্দোলনের নাম করে অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করে। কেউ কেউ বলেন, ‘যারা বিষপান করেছে, তাদের একজন তো সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়েই ফিরেছে। তাহলে হঠাৎ বিষপান কেন? এটা হচ্ছে নিজেদেরকে সামনে আনার জন্য সাজানো নাটক।
বিষপানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীদের মধ্যেই বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এভাবে নাটক করে মূল দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিষপানকারী চার যুবকের অবস্থান নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
আরও পড়ুন: জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো ৪ যুবকের বিষপান, হাসপাতালে ভর্তি
আজ দুপুরে তাদের খোঁজ নিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫২৬ নম্বর রুমে গেলে জানা যায়, বিষপানকারীরা হাসপাতালে আর নেই। ওই রুমের দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স নন্দিতা রায় ও একাধিক হাসপাতাল কর্মী জানান, তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনচ্চুক কয়েকজন জানান তারা আন্দোলনে গেছেন। আন্দোলন শেষ করে হয়তো আবার আসতে পারেন।
এছাড়াও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিষপান করা চারজনের মধ্যে প্রথমে দুইজন কোনো অনুমতি না নিয়েই আন্দোলনে যোগ দিতে চলে যায়। পরে বাকি দুইজন মৌখিকভাবে জানায় যে, আগেই যাওয়া দুইজন আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এবং তারাও (পরবর্তী দুইজন) আন্দোলনে অংশ নিতে যাচ্ছে। তবে আন্দোলন শেষে তারা সবাই ফেরত আসবে বলেও জানিয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা হাসপাতালে ফিরে আসেনি।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সিঙ্গাপুর থেকেও ডাক্তার এনেছি। তারা এসে বলছেন, ‘আপনারা যা করেছেন, আমরাও এখানে এলে তাই করতাম।’ কিন্তু প্রথম দিনেই চোখে যে ক্ষতি হওয়ার, তা হয়ে গেছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি চোখের নষ্ট হওয়া অংশ যতটা সম্ভব উন্নত করতে।’
আরও পড়ুন: দেড় মাস পর আন্দোলন থেকে সরে এলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যেসব রোগীকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছি, সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে দেওয়া চিকিৎসার চেয়ে উন্নত কিছু তাদের কাছে নেই। এরপরও আমরা ভাবি, কারও বিদেশে যাওয়া দরকার কি না, তা নির্ধারণে আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। এই কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয়, কাকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
চোখে আহতদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ৫৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ৪৬ জনের অবস্থা ভালো, তাদের আর হাসপাতালে থাকার দরকার নেই। তবে ৭–৮ জনের চোখে এখনও সমস্যা রয়ে গেছে, চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে তারা এখনই হাসপাতালে থেকে যেতে চাইছেন। হয়তো তারা মনে করছেন, এখানকার চিকিৎসকেরা আছেন, চিকিৎসা চলছে, তাই নিরাপদ বোধ করছেন।’
ডা. খায়ের আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের বেশিরভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা শঙ্কায় আছেন, হাসপাতাল ছেড়ে গেলে পুনর্বাসনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। এ জন্য অনেকে যেতে চাইছেন না।’
জুলাই মাসে সহিংসতায় আহতদের সংগঠন ‘জুলাই সংসদ’-এর সদস্য সচিব আপন অভিযোগ করেছেন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি অবহেলিত হচ্ছে এবং তাদের ঘিরে রাজনৈতিক লাভের চেষ্টাও চলছে।
তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আহত অবস্থায় যারা ভর্তি আছেন—উভয়েরই দায় আছে। যদি তারা সুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের রিলিজ দিয়ে দিক। আর রিলিজ দেওয়ার পরও যদি তারা হাসপাতাল না ছাড়েন, তাহলে কর্তৃপক্ষ মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি দেশবাসীকে জানাতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই হাসনাত, সারজিস আর নাহিদের সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। আহতদের ঘিরে সবাই রাজনীতি করে যাচ্ছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করেছি, পারিনি। তাদের চারপাশে যারা আছেন, বেশিরভাগই চামচা ও চাটুকার শ্রেণির। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।’
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘কে কী করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে—এসবের কোনো খবরই আর আমাদের কাছে নেই। সমন্বয়ক ও এনসিপির কথাও একই, তারাও বলছে পুরো বিষয়টি এখন কিছু সুবিধাভোগী চামচাদের দখলে চলে গেছে। বাকিরা ব্যস্ত আছেন নির্বাচন নিয়ে।’
আপন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল ১০ দিন বা অন্তত ৫ দিনের মধ্যে আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং দায়িত্ব নির্ধারণের বিষয়গুলো মিটমাট করে দেওয়া। কিন্তু তার কিছুই হয়নি।’