দেড় মাস পর আন্দোলন থেকে সরে এলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০৭:২২ PM , আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫, ১২:৪৪ AM

৬ দফা দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলনে থাকা দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কারিগরির জন্য নেওয়া কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা অবহিত করতে এক মতবিনিময় সভায় বসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। এ সময় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিনিধি এ ঘোষণা দেন।
মতবিনিময় সভায় প্রতিনিধি শাহজালাল আহমদ বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। তবে আমাদের দাবিগুলো যাতে সম্পূর্ণরূপে দ্রুত বাস্তবায়িত হয় সেটাই আমরা চাই। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা সচিব স্যারের কথা অমান্য করে কোনো আন্দোলনে যায়নি। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমরা থাকতে চাই। স্যারের প্রতি সম্মান অটুট ছিল এবং আগামীতে থাকবে।
এসময় সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম লেন, শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকিগুলোও প্রক্রিয়াধীন। আমরা তাদের সঙ্গে সর্বশেষ সভায় এ আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা সেটা তারা বলবে।
পরে শাহজালাল আহমদ বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী ভাইবোনেরা ইতিমধ্যে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়েছে। আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছি। আমরা আগামীকে সেভাবেই থাকবো। আর জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনো কর্মসূচি করবো না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শামসুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) রেহানা ইয়াছমিন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান, কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন, আইডিইবির আহ্বায়ক প্রকৌশলী কবির হোসেন, সদস্য সচিব প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন, এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ইরাব) সভাপতি ফারুক হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান প্রমুখ। এছাড়া সভায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ১২ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
ছয় দফা দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে দেশের বেশিরভাগ পলিটেকনিকে তালা ঝুলিয়ে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এসব দাবি মানার আশ্বাস দেওয়া হলে তারা অবরোধে থেকে সরে আসেন। এদিকে গত ৭ মে শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সর্বশেষ আজ তারা আন্দোলন থেকে পুরোপুরি সরে আসার কথা জানালেন তারা।
এর আগে ছয় দফা পূরণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। সপ্তাহখানেক ধরে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করলে ২২ এপ্রিল তারা আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন। তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে তাদের তরফ থেকে।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে গত ২২ এপ্রিল একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের একজন উপদেষ্টাকেও কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিভাগের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল কমিটিকে। এদিকে, গত ১৫ মে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ছিল–
>> জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের প্রমোশনের হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
>> ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।
>> উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।
>> কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্বনিয়োগ দেওয়া।
>> কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
>> ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।