আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

‘দিবস দিয়ে কী হবে, কাজ না থাকলে পেট চলে না’

  © টিডিসি ফটো

দিনাজপুরের আসলাম উদ্দিন ফেনীর বড় বাজারে লেবারের (শ্রমিকের) কাজ করছেন গত কয়েক বছর ধরে। প্রতিদিন ভোরে উঠে বাজারে আসেন, দিনভর কাঁধে করে সবজি, চালের বস্তা, এমনকি ফ্রিজ কিংবা গ্যাস সিলিন্ডারও টেনে নিয়ে যান এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। এ পরিশ্রমের জন্য দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা আয় হয় তার। কিন্তু এ টাকায় পরিবারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান তিনি।

কিছুটা আক্ষেপের সুরে আসলাম উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‍‍‍‍“শুধু দিবস দিয়ে কি হবে? কাজ না থাকলে তো আমাদের পেট চলে না। আমাদের এ কাজে কোনো নিরাপত্তা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের দেখার কেউ নেই। স্বল্প আয়ে পরিবার নিয়ে চলা আমাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।”

লেবার

আসলাম উদ্দিনের এই গল্প যেন ফেনীর বিভিন্ন বাজারের শ্রমিকেরই প্রতিচ্ছবি। সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শ্রমিক বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো, ভারি জিনিস বহন, ট্রাক লোড-আনলোডের কাজ করছে।

শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এই কাজ করে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা মজুরি পায় তারা। মজুরি পেলেও তা তাদের পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, বাসস্থান সংকট ও চিকিৎসা ব্যয়ের চাপে হিমশিম খেতে হয় তাদের।

বরিশাল জেলার বাসিন্দা মো. সোহাগ গত কয়েক বছর ধরে ফেনীর বড় বাজারে লেবারের কাজ করছেন। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “আমি প্রতিদিন সকাল থেকেই বাজারে মাল টানা, বস্তা ওঠানো-নামানো, দোকানে পণ্য সরবরাহসহ নানা কাজ করে থাকি। পরিশ্রমের বিনিময়ে দৈনিক আয় হয় ১০০০ থেকে ১,২০০ টাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাটতে হয়। কাঁধে ভার, পায়ে ব্যথা সব সয়ে কাজ করতে হয় আমাদের।”

জামাল হাওলাদার নামের আরেক শ্রমিক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “আমি ট্রাক লোড-আনলোডের কাজ করি। এ কাজের মাধ্যমে দৈনিক ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাই। তবে কাজ না থাকলে কোনো আয়ও থাকে না। বেকার বসে থাকতে হয়।”

রংপুর থেকে আসা শ্রমিক হারুন মিয়া দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “আমি প্রায় দশ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কখনো প্রচণ্ড রোদ, কখনো বৃষ্টি, আবার কখনো ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কাজ করি। আমরা ট্রাক থেকে মালামাল লোড-আনলোড করি। আবার মাঝে-মধ্যে মানুষজনের বাজারের ব্যাগ গাড়িতে তুলে দিই। শরীরের ওপর দিয়ে অনেক সময় ভারি মাল পড়ে গিয়ে আহত হই, কিন্তু চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্যও থাকে না আমাদের।”

ফেনী জেলার লেবার ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “ফেনীতে স্থানীয় শ্রমিকের সংখ্যা কম। খুলনা, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকরাই মূলত এই পেশায় যুক্ত। এই পেশায় নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে এবং আমাদের নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ করতে হয়। অসুস্থ হলেও অনেক সময় চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় না। চিকিৎসার অভাবে অনেক শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করেছে। এছাড়া বিভিন্ন দোকানভেদে শ্রমিকদের মজুরিতেও পার্থক্য রয়েছে। কোথাও বেশি, কোথাও কম দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ের ব্যয়বহুল জীবনে এই আয় দিয়ে চলা অত্যন্ত কষ্টকর। আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন আমাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।”

প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো—‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!