তুরস্ক
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এরদোয়ান কেন সুদের হার কমাচ্ছেন?
- মোহাইমিন পাটোয়ারী
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২৮ AM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১, ০২:৫২ PM
কিছুদিন আগে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর ঘোষণা দেয়ার পরেই লিরার (তুরস্কর মুদ্রা) দর স্মরণকালের সর্বনিম্নে পৌঁছায়। এর আগে ২০২১ সালের জুন মাসে তুরস্কের মুদ্রার মূল্য স্মরণকালের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে যায়। এই ঘটনা ও ঘটেছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানাবার পরে।
এই ব্যাপারে এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সুদের হার কমানো দরকার - এমনকি আজ আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথেও কথা বলেছি।’
অর্থনীতিবিদদের মাঝে প্রচলিত একটি বিশ্বাস হচ্ছে সুদের হার কমালে মুদ্রার মূল্য হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। তার কারণ বর্তমানে একটি দেশের অর্থনীতিতে সুদের হার কমাবার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেয়। টাকা ছাপালে যেহেতু মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে তাই সুদের হার কমাতে চাইলে মূল্যস্ফীতি ঘটে এবং অপরাপর দেশের তুলনায় মুদ্রার দাম পড়ে যায়। অপরপক্ষে সুদের হার বৃদ্ধি করলে মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায়।
এই ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার কমানো দুর্ভাগ্যবশত তুর্কি লিরাকে দুর্বল করছে। লিরার এই পতনের অর্থ হল কঠোর আর্থিক অবস্থা এবং দুর্বল প্রবৃদ্ধি।’
তারপরেও কেন এরদোগান সুদের হার কমাতে চাচ্ছেন?
এই ব্যাপারে তুর্কি নেতা বলেন, ‘সুদের হার কমালে বিনিয়োগের খরচ কমবে এবং অধিক বিনিয়োগের হলে মোট দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য কমে যাবে।’
কিন্তু এই বছর তুরস্কের মূল্যস্ফীতি প্রায় উনিশ শতাংশ ছুঁয়েছে যা সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ। (সোর্স- trading economics) তারপরেও কেন তুরস্কের এই জনপ্রিয় নেতা সুদের হার কমাতে চাইছেন?
এই ব্যপারে এরদোয়ান মন্তব্য করেছে, ‘যদি আমরা বিনিয়োগ থেকে সুদের বোঝা সরিয়ে ফেলতে পারি, তাহলে আমরা একটি স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে পারব। কারণ এই সুদই হচ্ছে মূল্যস্ফীতির কারণ।’
এরদোয়ান যে সুদের হার শূন্যর কোঠায় নামিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তা এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠে। অর্থনীতিবিদগণ স্বীকার করেন যে, সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা যায়। তবে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হলেও তুরস্কের মুলস্ফীতি কমছে না বরং বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে।
সমস্যা হচ্ছে একসাথে দুইটি জিনিস পাওয়া সম্ভব নয়, অর্থাৎ একই সাথে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সুদের হার কম রাখা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে তুরস্ককে যেকোন একটি পথ বেছে নিতে হবে এবং এরদোগান সুদের হার কম রাখার পথ বেছে নিয়েছেন। একারণে লিরার দর পতন হচ্ছে।
তবে এই সমস্যার একটি সমাধান হচ্ছে রপ্তানি বৃদ্ধি করা এবং আমদানী হ্রাস করা। তুরস্ক যদি রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারে এবং আমদানি হ্রাস করতে পারে তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে লিরার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং কোন বস্তুর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দামও বেড়ে যাবে। এভাবেই লিরার দরপতন ঠেকানো সম্ভব এরদোয়ানের পক্ষে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক